পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্টাস, ও টটেনহ্যাম– এই পাঁচ বড় দল একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে মাঠে নেমেছিল। গ্রুপের শেষ ম্যাচে নামার আগেই তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউটের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলায় ম্যাচ ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। তাদের মধ্যে বায়ার্ন, জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজি আবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াও নিশ্চিত করে ফেলেছিল। বুধবার রাতে ভাবনাহীন ম্যাচে সহজেই নির্ভেজাল জয় পেয়েছে বড় দলগুলো।
গ্যালতাসারের বিপক্ষে পিএসজি জিতেছে ৫-০ গোলে। ক্লাব ব্রুগকে ১-৩ গোলে হারায় রিয়াল মাদ্রিদ। বায়ার লেভারকুসেনকে ২-০ হারায় জুভেন্টাস। টটেনহ্যাম হটস্পারকে ৩-১ পরাজিত করে বায়ার্ন মিউনিখ, লোকোমোটিভ মস্কোকে ২-০ গোলে হারিয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও ডায়নামো জাগরেবের মাঠ থেকে ১-৪ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে ম্যানচেস্টার সিটি।
চাপ না থাকায় বেশিরভাগ দলই তারকা খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে নেমেছিল। শুধু ঘরের মাঠে গ্যালাতাসারের বিরুদ্ধে পিএসজির হয়ে দেখা যায় নেইমার, এডিনসন কাভানি ও কাইলিয়ান এমবাপেের সকলকে। এই মৌসুমে তিন তারকা একসঙ্গে বেশি খেলার সুযোগ পাননি। কোচ টমাস টুখেল দেখে নিতে চেয়েছিলেন তিন ফুটবলারের কম্বিনেশন। তাতে কাজে দিয়েছে, গোল পেয়েছেন তিনজনই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি মৌসুমে প্রথম গোল পেয়েছেন নেইমার। ম্যাচের ৪৬ মিনিটে দলের তৃতীয় গোল করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। তার আগে ৩২ মিনিটে প্রথম লিড এনে দেন মাউরো ইকার্দি। ৩৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পাউলো সাবারিয়া। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩ মিনিটে গোল করেন কাইলিয়ান এমবাপে। আর ৮৪ মিনিটে ব্রুগের কফিনে শেষ পেরেক গেঁথে দেন কাভানি।
রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান সুযোগ পেয়েছিলেন দলের ‘ছোটদের’ দেখে নেয়ার। তার কৌশল কাজে লেগেছে। হ্যাজার্ড ইনজুরিতে থাকলেও দলকে সহজ জয় এনে দেন রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও অভিজ্ঞ লুকা মদ্রিচ।
৫৩ মিনিটে প্রথম গোল করেন রদ্রিগো। দুই মিনিট পর অবশ্য সমতা ফিরিয়েছিলেন ব্রুগের ভানাকিন। ৬৪ মিনিটে রিয়ালকে আবার লিড এনে দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। আর যোগ করা সময়ে স্কোরলাইন ৩-১ করেন মদ্রিচ।
এই জয়ে ছয় ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘এ’র শীর্ষে থাকে পিএসজি। সমানসংখ্যক ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে রিয়াল। তিন ও দুই পয়েন্ট নিয়ে আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ক্লাব ব্রুগ ও গ্যালতাসারেকে।
বেশিরভাগ ম্যাচই যেখানে নিয়মরক্ষার, সেখানে উত্তেজক হয়েছিল গ্রুপ ডি’র দুই নম্বর স্থান দখলের লড়াই। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও বায়ার লেভারকুসেন– দুই দলের নকআউটে যাওয়ার সুযোগ ছিল জুভেন্টাসের পেছনে থেকে। অ্যাটলেটিকোর পয়েন্ট সাত এবং লেভারকুসেনের ছিল ছয়। জুভেন্টাসের কাছে হেরে বিদায় নিশ্চিত হয় লেভারকুসেনের। আর লোকোমোটিভ মস্কোকে হারিয়ে নকআউট নিশ্চিত করে অ্যাটলেটিকো।
লেভারকুসেনের মাঠে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য ছিল ম্যাচ। অবশেষে তালা খোলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। জার্মান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ২৬ ম্যাচে যেটি ২৮তম গোল রোনালদোর। যোগ করা সময়ে (৯০+২) দ্বিতীয় গোল করেন গঞ্জালো হিগুয়েন।
জুভেন্টাসের মতো একই ব্যবধানে জয় পেয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। দলের হয়ে প্রথম গোল করেন জোয়াও ফেলিক্স। ১৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন পর্তুগিজ তারকা। ৫৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন ফিলিপ।
ছয় ম্যাচ থেকে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘ডি’র শীর্ষে জুভেন্টাস। ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থেকে নকআউটে অ্যাটলেটিকো। এই গ্রুপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ৬ পয়েন্ট পাওয়া লেভারকুসেন ও তিন পয়েন্ট পাওয়া লোকোমোটিভ মস্কোকে।
টটেনহ্যামে যোগ দেয়ার পর প্রথম তিন ম্যাচে উড়ছিলেন হোসে মরিনহো। লিগ ম্যাচে তার দৌড় থামিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও হারতে হয়েছে ‘স্পেশাল ওয়ান’র দলকে। বায়ার্নের মাঠে গিয়ে তাদের হার ৩-১ গোলে।
১৪ মিনিটের বায়ার্নের হয়ে প্রথম গোল করেন কিংস্লে কোমান। রায়ান সেসেগনোনের গোলে ২০ মিনিটে সমতায় ফেরে টটেনহ্যাম। তবে ৪৫ মিনিটে টমাস মুলার ও ৬৪ মিনিটে ফিলিপে কৌতিনহোর গোলে জয় নিশ্চিত হয় স্বাগতিক বায়ার্নের। এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে রেড স্টার বেলগ্রেডকে ১-০ গোলে হারায় অলিম্পিয়াকোস।
ছয় মাচের ছয়টিতেই জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘বি’র শীর্ষে বায়ার্ন। হারলেও ১০ পয়েন্ট পাওয়া টটেনহ্যাম নকআউটে চলে গেছে। চার ও তিন পয়েন্ট পেয়ে বিদায় নিয়েছে অলিম্পিয়াকোস ও রেড স্টার বেলগ্রেড।
এমনিতেই সিটির ডেভিড সিলভা, সার্জিও আগুয়েরোর চোট ছিল। ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলা সুযোগ পেয়েছিলেন দলের বাকিদের দেখে নেয়ার। সিটির বিরুদ্ধে ডায়নামো জাগরেব অবশ্য জেতার জন্যই খেলে। কারণ, জিতলে তাদের সামনে সুযোগ ছিল নকআউটে যাওয়ার। কিন্তু সেটা হয়নি।
ম্যাচের ১০ মিনিটে লিড পেয়েছিল ডায়নামো জাগরেব। পরের ৪৪ মিনিটে তাদের একাই শেষ করে দেন গ্যাব্রিয়েল জেসাস। হ্যাটট্রিক করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। ৩৪ মিনিটে সমতায় ফেরানোর পর ৫০ ও ৫৪ মিনিটে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। ৮৪ মিনিটে গোলের হালি পূরণ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন ফিল ফোডেন।
ছয় ম্যাচ থেকে ১৪ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপ ‘সি’র শীর্ষে থাকল ম্যানসিটি। ছয় ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়েও নকআউটে চলে যায় আটালান্টা। বুধবার রাতেই তারা শাখতার দোনেস্ককে হারায় ৩-০ গোলে। বিদায় নেয়া শাখতারের পয়েন্ট ৬ এবং আরেক বিদায়ী দল জাগরেবের পয়েন্ট পাঁচ।