একই দিনে একই কায়দায় একজন প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা এবং অন্য আরেক জন প্রকাশক ও লেখককে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছে সারা বিশ্ব। এমন ঘটনাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবেই উল্লেখ করে তারা।
এরই মধ্যে শোক ও নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং জার্মান দূতাবাস।
জাতিসংঘ তাদের বিবৃতিতে বলে, আরো আক্রমণ ঠেকাতে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে নিন্দিত হতে হবে।
জাতিসংঘের স্থানীয় সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়াটকিনস আরো বলেন, অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দেশে যারা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে হবে।
হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে হুমকির সম্মুখীন, সেই ব্যাপারে সচেতন হবারও আহবান জানায় জাতিসংঘ।
বাংলাদেশে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়ুডন এই আক্রমণকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবেই উল্লেখ করেন।
জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের পরিবারের প্রতি শোক এবং আহত শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক রণদীপম বসু এবং ব্লগার তারেক রহিমের জন্য সংহতি প্রকাশ করে ইইউ।
এমন একটি ভয়াবহ ঘটনার পর সরকারের কার্যক্রম নিযেও কথা বলেন ইইউ, এখন সরকারের উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সবার বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করা।
রাষ্ট্রদূত মায়ুডন মনে করেন, আইনশৃংক্ষলাবাহিনীর ত্বরিত পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধতাই ধর্মান্ধদের এমন সব অপরাধ রোধ করতে পারে।
এমন নৃশংসভাবে একজনকে হত্যা এবং তিনজনকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এক বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ৩১ অক্টোবর তারিখে প্রকাশক ও ব্লগার ফয়সাল আরেফিন দীপন, আহমেদুর রশিদ টুটুল, এবং আরো দুই জনের ওপর যে কাপুরুষোচিত হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার নিন্দা জানায়। নিহতদের পরিবার, বন্ধু এবং বাংলাদেশী জনগণের প্রতি আমরা সহানুভূতি জানাই।
এ সমস্যা সমাধানে যৌথ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানায়, এই বছরের শুরুতে নীলয় চক্রবর্তী, ওয়াসিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ এবং অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের মতো এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড সহিংস চরমপন্থা রুখতে আমাদের উভয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপরই জোর দেয়।
এতে বলা হয়, যে সকল বাংলাদেশী এই ধরনের পৈশাচিক কর্মকাণ্ড প্রত্যাখ্যান করে, আমরা তাদের পাশে আছি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা কাজ করে যাব।
জার্মান দূতাবাসের দেয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার বিষয়ে সচেতন জার্মানী। গতকালের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় জার্মান দূতাবাস।
গত কয়েক মাসের বিভৎস সব ঘটনারই সাম্প্রতিক চিত্র এবারের আক্রমণ। পুরান ঢাকায় শিয়া মিছিলে বোমা হামলার পর জার্মানী দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ দিয়েছিলো তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।
এবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিনজ বলেন, এবারের ঘটনা খুবই নাড়া দেয়ার মতো। এই দেশের মূল্যবোধই হলো ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলাদেশে একই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ও মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ইতিহাস রয়েছে। এবারের আক্রমণ বিশেষ কারো উপর আক্রমণ নয় বরং এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ।
এমন সব ঘটনা বিগত কয়েক দশকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উপরও প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করেন জার্মান দূতাবাস।