পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বে উন্নত প্রাণীর অস্তিত্বের সন্ধানের বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে সরকারের নেয়া উচিত বলে মনে করছেন মার্কিন ও ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সে উদ্দেশ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ চেয়েছেন তারা।
ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মানমন্দির ভার্জিনিয়ার ‘ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রনমি অবজারভেটরি’র পরিচালক ড. অ্যানথনি বিযলি বিবিসি’কে বলেন, বছরের পর বছর ধরে মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রটিকে দমিয়ে রেখে এসেছেন সরকারি গবেষণা অর্থায়ন সংস্থাগুলো। অথচ এই ক্ষেত্রটিতে সরকারের আরও অনেক বেশি সহায়তা প্রয়োজন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় সিয়াটলে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’র সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বাইরে বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান বিষয়ক বৈশ্বিক প্রকল্প (সেটি) খুব গুরুত্ববহ একটি প্রকল্প হওয়ার সত্ত্বেও একে এতদিন ধরে একটি ‘আলঙ্করিক বিজ্ঞান’ হিসেবেই দেখে আসছে সরকার।
তার মতে, এখন সময় এসেছে সেটি’কে অন্ধকার কোন থেকে বের করে এনে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্য সবগুলো ধারার সঙ্গে সমন্বিত করার।
সেটি গবেষণার অন্যতম বেসরকারি অর্থদাতা একটি সংস্থা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত ‘ভেরি লার্জ অ্যারে’ (ভিএলএ) মানমন্দির পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্যান্য স্থানে বুদ্ধিমান প্রাণীর খোঁজে যোগ দিতে যাচ্ছে।
ভিএলএ নিয়ে নতুন এ ঘোষণার পরই সরকারি বরাদ্দ চেয়ে বক্তব্য দেন ড. অ্যানথনি বিযলি।
ভিএলএ হচ্ছে বহু ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টেনা বিশিষ্ট একটি মানমন্দির। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নতমানের সরঞ্জামে সবচেয়ে সুসজ্জিত টেলিস্কোপসমূহের সংগ্রহ রয়েছে বলে মনে করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি’স সেটি রিসার্চ সেন্টার’র অন্তর্ভুক্ত ‘ব্রেকথ্রু লিসেন’ সায়েন্স টিম কাজ করছে বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান নিয়ে। দলটির প্রধান ড. অ্যান্ড্রু সিয়েমিয়ন বলেন, এই গবেষণায় ভিএলএ’র সংযোজনের ফলে উন্নত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণীর খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা ‘১০ – এমনকি ১০০ গুণ’ বেড়ে গেছে।
বিবিসি’কে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে সেটি গবেষকরা এবার পুরো আকাশকে যতটা সুবিধাজনকভাবে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য জরিপ করতে পারবেন তা আগে কখনো সম্ভব হয়নি।
একই সঙ্গে ভিএলএ যুক্ত হয়ে সেটি প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এই বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগেই সরকারি তহবিলের অর্থ চেয়ে বসেছেন জোতির্বিদরা।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরাও এতে ভরসা পেয়েছেন অনেকখানি। ব্রেকথ্রু লিসেন সংগঠনটির আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা দলের প্রধান যুক্তরাজ্যের রাজ জ্যোতির্বিদ প্রফেসর লর্ড রিস বলেন, ব্রিটিশ সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড ঢালার পরও শক্তিশালী লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যন্ত্র এখনো প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বের বাইরে অতি-পারমাণবিক কণা পাওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
সেখানে সরকার সেটি’র পেছনে অল্প কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড তো ব্যয় করতেই পারে। প্রকল্পটি নিয়ে তিনি এখন আগের চেয়ে আরও অনেক আত্মবিশ্বাসী বলেও মন্তব্য করেন।