‘বিভিন্ন দেশের বুক স্টলগুলোতে বাংলাদেশের লেখকদের বই একেবারেই দেখি না। ভারতের লেখকদের প্রতিনিধিত্ব অনেক। বাংলা একাডেমি অনেক বই অনুবাদ করে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বিপণন তাদের কাজ নয়। তাই বিপণনটা জরুরি। হারপার কলিন্স-এর মত প্রকাশকরা আমাদের বই প্রকাশ করলে তা বিশ্বজুড়ে বইয়ের স্টলে পাওয়া সম্ভব হবে। আনিসুল হকের বইটি বিশ্ববাজারে প্রবেশের সেই দরজাটা খুলে দিয়েছে। এ বইটি যদি পাঠকের সমাদর পায় তবে বাংলাদেশের অন্য লেখকদের বই প্রকাশেরও পথ তৈরি হবে।’
বলছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আর কথাগুলো বলছিলেন দেশের জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হকের লেখা ‘আয়েশামঙ্গল’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য ব্যালাড অব আয়েশা’ নিয়ে। শুক্রবার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা হার্পার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হয় আনিসুল হকের লেখা এই উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি কামাল চৌধুরী এবং কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। বাতিঘর ঢাকা ও হার্পার কলিন্সের আয়োজনে ‘দ্য ব্যালাড অব আয়েশা’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি অনুবাদ করেছেন লেখক ইনাম আহমেদ।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শিল্পী ও সাংবাদিক এলিটা করিম। শুরুতেই সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান।
আনিসুল হকের লেখা ‘দ্য ব্যালাড অব আয়েশা’ এখন থেকে বিশ্ব সাহিত্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে জানিয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আনিসুল হক লেখকের অহংকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন। পশ্চিমের সঙ্গে যদি আমাদের সাহিত্যের তুলনা করি তাহলে আমাদের লেখকরা তাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আমাদের সাহিত্যকে আমরা তাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি না। পশ্চিমারা বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিশ্বে জায়গা করে নিচ্ছে। আনিসুল হকের উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ দিয়ে বিশ্ব সাহিত্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করছে।
এদিকে ‘আয়েশামঙ্গল’ লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশে রহস্যজনক অভ্যুত্থান হয়েছিল। সেইসব অভ্যুত্থান নিয়ে ১৯৯৮ সালে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ভোরের কাগজে। সেইসময় এক সেনা সদস্যের স্ত্রী তার ছেলেকে নিয়ে স্বামীর খোঁজ জানতে পত্রিকা অফিসে আসেন। ২০ বছর পরে তিনি জানতে পারেন তার স্বামী নিহত হয়েছেন। এর আগে তার জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থার কথাই পরিবারটি জানতে পারেনি। সেই ঘটনা আমাকে আলোড়িত করে। তা নিয়েই উপন্যাস লিখি আয়েশামঙ্গল।
‘আয়েশামঙ্গল’কে উপজীব্য করে এরআগে টিভি ফিকশন নির্মাণ করেছিলেন মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। একই কাহিনি নিয়ে আবারও নতুন করে চ্যানেল আইয়ের জন্য ‘আয়েশা’ নামে একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করছেন সেই ফারুকীই। আসছে ঈদ উপলক্ষ্যে যা চ্যানেল আইয়ের পর্দায় দেখানো হবে।