প্রয়াত চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তার ইচ্ছাতেই অনাড়ম্বর ভাবে করা হয়েছে শেষকৃত্য। শেষযাত্রায় ছিলেন টালিউডের বিশিষ্টজনেরা ও গুণগ্রাহী বহু মানুষ।
পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা ছিল তার দেহ। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল বিকালে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দেশপ্রিয় পার্কের কাছে যে বাড়িতে তিনি দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেই শেষযাত্রায় পা মিলিয়েছিলেন টালিউডের বিশিষ্টজনেরা।
মৃণাল সেন আগেই বলে রেখেছিলেন, তার শেষযাত্রায় যেন কোনও ‘বাহুল্য’ না থাকে। পরিবারের সদস্যদের কাছে মৃণাল সেন বলেছিলেন, তার শেষযাত্রায় যেন কোনো ফুলের মালা না থাকে। সরকারি আতিশয্যও যেন না থাকে। এমনকি রবীন্দ্র সদন কিংবা নন্দনেও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রাখা চাননি তিনি। তাই সাদামাটা রাখা হয়েছিল শেষকৃত্যের সব আয়োজন।
শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত ছিলেন অঞ্জন দত্ত, রঞ্জিত মল্লিক, শ্রীলা মজুমদার, নন্দিতা দাশ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীদের মতো রাজনৈতিক নেতারাও।
৩০ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেন মৃণাল সেন।
বিশ্ব সিনেমার ভাষা বদলে যাদের অবদান তাদের মধ্যে মৃণাল সেনকেও একজন মনে করা হয়। তার হাতে বাংলা ভাষার সিনেমার ভাষা পরিবর্তন যেমন হয়েছে, তেমনি সমকালীন দুই নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের সাথে উচ্চারিত হতো তার নাম। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মৃণাল সেনের সিনেমার ছিল বেশ নামডাক।
নিজের প্রথম ছবি ছিল ‘রাতভোর’, তবে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে ১৯৫৯ সালে ‘নীল আকাশের নীচে’ ছবিটি তাকে চারদিকে পরিচিতি এনে দেয়। কলকাতা-৭১, পদাতিক, এক দিন প্রতিদিন, খারিজ, চালচিত্র ও ভুবন সোমের মতো বেশকিছু কালজয়ী সিনেমা নির্মাণ করে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দাগ কেটে গেছেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম নেয়া মেধাবী এই নির্মাতা।
মৃণাল সেনের শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায় ২০০২ সালে। বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সাড়া ফেলেন মৃণাল। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে মৃণাল সেন পদ্মভূষণ লাভ করেন এবং ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান।