ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শোতে হামলার পর ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় পরস্পরকে দুষছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস।
ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে কলকাতায়। এরই মধ্যে অমিত শাহসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ওই ঘটনার পরের দিন বুধবার অমিত শাহ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, মঙ্গলবারের রোড-শোতে হামলাএবং ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেয় তৃণমূল সমর্থকরা। এমন বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে লোকসভা নির্বাচনে একটা ইমেজ তৈরি করতে চেয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য নয়াদিল্লিতে বিজেপি নেতাকর্মীরা মানববন্ধন করেন। কলকাতার ঘটনার পেছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে দাবি করা হয় মানববন্ধন থেকে।
Delhi: Bharatiya Janata Party (BJP) holds protest against violence in BJP President Amit Shah’s roadshow in Kolkata, West Bengal yesterday. Union Ministers Harsh Vardhan, Jitendra Singh and Vijay Goel also present pic.twitter.com/pIK872wgYF
— ANI (@ANI) May 15, 2019
দেশটির নির্বাচন কমিশন গতকালকের ঘটনার ভিডিও পর্যালোচনা করে বিস্তারিত জানাবে বলে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে অমিত শাহের রোড শো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছাতেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বিজেপির সভাপতিকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকে তৃণমূল কর্মীরা। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে বিজেপি সমর্থকরাও৷ দুই দলের কর্মী-সমর্থকরা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র বলে খ্যাত কলেজ স্ট্রিট।
এসময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির দাবি, তৃণমূল সমর্থকরাই প্রথমে তাদের দিকে ঢিল ছুড়ে হামলা চালিয়েছে।
অমিত শাহ জানান, ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই একটি মেডিক্যাল কলেজের কাছে ছিলেন তিনি। হঠাৎ তৃণমূলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
টুইটারে বিজেপি সভাপতি বলেন, মমতা দিদির সন্ত্রাস ও গুন্ডাগিরি পশ্চিমবঙ্গের মতো পূণ্যভূমির মানুষের হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর পথে আর বাধা হতে পারবে না।
ঘটনার পরপরই দিল্লিতে বিজেপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে ছুটে যায়। এ দলে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
টুইটারে জেটলি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ কি সন্ত্রাসীদের সরকার পেয়েছে? অমিত শাহের শান্তিপূর্ণ র্যালিতে তৃণমূলের হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এখানে কি আর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব? সবার নজর এখন কমিশনের দিকে।
এ ঘটনায় বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরাও দোষ দিয়েছেন মমতাকেই। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিস বলেন, এই ঘটনা গণতন্ত্রকে হত্যা করা হলো। যেভাবে অমিত শাহের রোড শোতে হামলা হলো আর তাতে পুলিশ যে প্রতিক্রিয়া দেখাল, তাতে মনে হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই ভীত যে, এখন গণতন্ত্রকেই হত্যা করতে চাচ্ছেন।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, এ হামলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসনের অভাবেরই প্রতিচ্ছবি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, অমিত শাহ নিজেকে কী ভাবেন? তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে নাকি? তিনি কি সৃষ্টিকর্তা যে, তার বিরুদ্ধে কেউ আপত্তি জানাতে পারবে না?
ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে শেষপর্বের নয়টি আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ মে। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। একারণে সব দলের প্রার্থীরাই উঠেপড়ে লেগেছেন কলকাতার ভোটারদের কাছে টানতে, চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা।
মঙ্গলবার প্রচারণার অংশ হিসেবে উত্তর কলকাতায় রোড শো করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এসময় যাদবপুর ও দক্ষিণ কলকাতায় গণ সমাবেশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী ও দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা সুনীল দেওধর। বসে ছিলেন না তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রীও। এদিন কলকাতায় তিনটি র্যালি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এমন সময় মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনা সেখানকার রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এর তৃণমূল ও বিজেপি মূর্তিটি ধ্বংস করার একে অপরকে অভিযুক্ত করে, যা বাংলায় পুনর্জাগরণের সবচেয়ে উদ্দীপক প্রতীকগুলির মধ্যে একটি।