ইটালির মিলান থেকে ছুটিছাটায় দেশে এলে পরিচিত–অপরিচিত যার সঙ্গেই দেখা হতো, একথা সেকথার পর আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা জাগ্রত হতো যে প্রশ্নে সেটা হলো,ভাই, মিলানে কী কাজ করেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে আমাকে এই প্রশ্নটা শুনতেই হতো।
১৯৮৭ সাল থেকে লেখালেখি করি।
১৯৯০ সাল থেকে সাংবাদিকতা।
একই সময় থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান বিভাগে নিয়মিত স্ক্রিপ্ট লেখা, পাণ্ডুলিপি গবেষণার কাজ করেছি।
ইউনিসেফের আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের গবেষণার কাজ করেছি।
নিছক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিছুকাল আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্সেও কাজ করেছি।
পরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া বিভাগে যোগদান করেছি– অনুষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কয়েকবছর পর, অস্থিরতার কারণে ২০০২ সালে সেখান থেকেও দেশের বাইরে চলে গিয়েছি। অবশ্য সেবারের বিদেশে চলে যাবার ঘটনা প্রথমবারের মতো ছিল না। এর আগে ১৯৯১ সালে সুইডেন এবং ১৯৯৭ সালে চেক রিপাবলিকে চলে গিয়েছিলাম। আমার বৈদেশ অবস্থান বেশিদিন স্থায়ী হয়নি আমারই কারণে– সে আরেক উপাখ্যান।
প্রথম প্রথম আমি আমার অতি উৎসাহী শুভাকাঙ্ক্ষীদের এরকম বালখিল্য প্রশ্নকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতাম, মাথা ঠাণ্ডা রাখতাম।
কী উত্তর দেব তাদের প্রশ্নের!
একদিন এক অগ্রজ সাহিত্যিক যিনি কয়েকবছর আগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে অভিষিক্ত হয়েছেন– আমার খুব নিকটের জন। তিনি আমাকে স্নেহও করেন, ভালোবাসেন। আমাদের মধ্যে খুব ভালো বোঝাপড়া আছে।
একদিন কী মনে করে তিনিও আমাকে এই প্রশ্ন করে বসলেন। তিনি হয়ত মনে করেছেন আমি বুঝি ওখানে এদেশের মতই কোনো সম্মানজনক কাজ করি।
আমি তার কথায় হতচকিত হই। অন্তত তার কাছে আমি এধরনের প্রশ্ন আশা করিনি। তিনি কেন আর সবার মত আমাকে কেন এরমকের প্রশ্ন করবেন!
খুব ইচ্ছে হলো অগ্রজকে বলি, ‘ভাই,আপনেও অগা-মগা পাবলিকের মতন অগা-মগা প্রশ্নই করলেন আমারে! বাংলাদেশের মানুষ দেশ ছেড়ে ইউরোপ–আমেরিকায় গিয়ে কেশ ফালায়…’
কথাটা বলতে পারলাম না। তাকে শুধু বললাম, ‘ভাই, যারা বিদেশে থাকে তাদের কখনো জিজ্ঞেস করবেন না, ওখানে কী কাজ করেন‘। আমার কথার ভেতরে কী ছিল জানি না, তবে আমার কথার পর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘মাহবুব, ভাই আমার। আমি কথাটা এভাবে বলতে চাইনি। তুমি রাগ কোরো না ভাই আমার…
দুই
জীবন–জীবিকা আর পরিস্থিতি বিবেচনায় মানুষকে দেশান্তরী হতে হয়। কাজ করে খেতে হয়। অভিবাসী মানুষ সে যে দেশেই যাক না কেন, যেভাবেই থাকুক না কেন, তার তখন একটা পরিচয়ই বড় হয়ে ওঠে তাহল, সে একা, বড় একা। সে কেবলই একা, সে অহর্নিশ একা…।