কোনো কিছুর বিপক্ষে মত প্রকাশে মানুষের বিতর্কের দিককে আরো উন্নত করে জানিয়ে গবেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে নিজের তর্কটা ভালো হতে হবে। এই ধরনের তর্কে মানুষ নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে থাকে।
মানুষের কথোপকথন বিশ্লেষক লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিজ স্টোকো বলছেন, মানুষ সবার সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে বলেই সাধারণত সে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে।
‘এমনকি যখন কারো মতের সঙ্গে মানুষ দ্বিমত প্রকাশ করে, তখন কোনো শব্দ বা শারীরিক ভাষা দিয়ে হলেও সেটাই বোঝাতে চায়; যে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থাতেই থাকতে চাই।’
এক গবেষণার পাওয়া মানুষের কথোপকথন উল্লেখ করে স্টোকো আরো বলেন, আমরা সবসময় ছাড় দেয়ার মনোভাব নিয়ে চলি। ওইসব মানুষকে এমন অবস্থানে রাখা হয়েছিলো; যেন তাদেরপক্ষে সমর্থন জানানো সহজ হয়।
‘গাইড টু ডিলিং উইথ কনফ্লিক্ট অ্যাট ওয়ার্ক’ গ্রন্থের লেখক অ্যামি ই. গ্যাল্লো বলেন, মানুষ সাধারণত কর্মক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব নিরসনের অনুরক্ত থাকে। কেননা যার পাশে বসে দিনের আট ঘণ্টা কাজ করতে হবে, তার সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে কে চায়? আর যদি কর্মসঙ্গী বস হয় তাহলে ভিন্নমত পোষণ করার ক্ষেত্রে আরো কম উদ্দীপক হয়। তবে এটা ভুল পদ্ধতি।
তিনি বলেন, সবাই একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে চায় তা ঠিক। কিন্তু আমরা যদি অমত প্রকাশ না করি, তাহলে আমরা ভালো কাজ দিতে পারবো না। দেওয়া কখনোই সম্ভব হবে না।
‘আমি এমন কিছু প্রতিষ্ঠান দেখেছি যারা ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ প্রত্যাশা করেছেন, এমনকি ভিন্নরকম কাজের পরিবেশও চেয়েছেন। আর যখন তারা এটা সমর্থন করেনি; তখন তাদের বলা হয়েছে, আমরা ভিন্নমত শুনতে চাই না।
বিজ্ঞানে শুধু মাত্র পরীক্ষণের মাধ্যমেই নতুন তত্ত্ব পরীক্ষা করা হয়ে থাকে না, বরং সেসব গবেষণা অন্যান্য গবেষকদের দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হয়।
এ বিষয়ে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর স্টুয়ার্ট ফায়ারস্টাইন মনে করেন, এসব চ্যালেঞ্জ খুবই উপযোগী। এমনকি যখন তিনি একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছেন তখনও।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা গেছে আমি হয়তো একটি পাণ্ডুলিপি পাবলিকেশনের জন্য দিলাম; কিন্তু একজন সমালোচক সেখানে একটি বড় ভুল খুঁজে পেলো। সেটার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ দেই।
‘কারণ আমি যদি লেখাটি প্রকাশ করে ফেলতাম, তাহলে মানুষের কাছে ভুল তথ্য যেতো। আর এখন শুধু আমি আর সেই সমালোচক জানি যে, আমি কতটা বোকা।’
গবেষকরা বলছেন, অমত প্রকাশ আপনার বিতর্কের দিকটাকে আরো উন্নত করবে। কারণ আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রতিপক্ষের বিতর্কের মোকাবিলা করবেন। সুতরাং আপনার নিজের তর্কটা ভালো হতেই হবে। আবার এমনও হতে পারে, আপনি আপনার মন বদলে ফেলবেন। অন্যের মতামত শুনে নিজের অহমবোধও উপেক্ষা করতে পারেন।
এটাও ঠিক কোনো কিছুতে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বরাবর অলস চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই ঢুকে যাই। আর অন্যদের কাছে নিজেকে প্রত্যয়ী করে তুলতে তাদের বিতর্কের দুর্বলতা ও ভুল ধরে দিলে নিজের ধারণা সম্পর্কেও স্পষ্ট হওয়া যাবে।
নিজের অমত প্রকাশ করতে গিয়ে উগ্র হতে হবে; বিষয়টা মোটেও তেমন নয় উল্লেখ করে গাল্লো বলেন, সমর্থন না করা নির্দয়। আপনি সহানুভূতি, সমবেদনা ও উদারতার মাধ্যমেও কারো মতকে সমর্থন নাও করতে পারেন।