বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ হত্যা মামলার চার্জশিট চূড়ান্ত করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই চার্জশিট আদালতে গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে আজ।
সাত জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রস্তুত করা হলেও এই হত্যার বিভিন্ন পর্যায়ে ১১ জন জড়িত ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর বাইরে একজনের বিরুদ্ধে হত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা ১১ জনকে চিহ্নিত করেছি। এর বাইরে অভিজিৎকে হত্যায় প্ররোচনা দেয়ার প্রমান মিলেছে শফিউর রহমান ফারাবী নামে আরেকজনের বিরুদ্ধে। এই কারনে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ১১ জনের মধ্যে আমরা সকলের নাম ঠিকানা পাইনি। ৬ জনের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা চার্জশিট দিচ্ছি। তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এখন পর্যন্ত। তারা হলেন- মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান শামস এবং আবু সিদ্দিক সোহেল। এই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
অভিজিৎ হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চার্জশিটে নাম থাকছে পলাতক মেজর জিয়ার। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিজিৎ হত্যায় প্ররোচনা দেয়ায় চার্জশিটে নাম থাকছে ফারাবীর। গ্রেফতার তিনজন সায়মন, সোহেল ও আরাফাতের নামও রয়েছে চার্জশিটভুক্ত ছয়জনের মধ্যে। পলাতক হিসেবে আকরাম হোসেন ওরফে আবিরের নাম রয়েছে চার্জশিটে, তার পরিচয় ও ঠিকানা পেয়েছে পুলিশ।
কিলিং মিশনে অংশ নেয় ১১ জন
মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিজিৎ হত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর জিয়াউল হক। তার নেতৃত্বে মোট ১১ জন এই কিলিং মিশনে অংশ নেয়। কিলিং স্কোয়াডের প্রধান ছিল মুকুল রানা, সে ডিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। আর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল সায়মন, সোহেল এবং আরাফাত। এই তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার করা যায়নি। তাদের গ্রেফতার করা হলে পরে সম্পুরক চার্জশিট দেয়া হবে। হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন আগে থেকে অভিজিৎকে অনুসরণ, জঙ্গিদের অপারেশনাল হাউজ ছিল ধানমন্ডিতেঃ পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, যেহেতু অভিজিৎ রায় বিদেশে থাকতেন, কবে দেশে আসবেন সেই তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে কিলাররা। অভিজিৎ দেশে ফেরার পর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জঙ্গিরা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। ২২ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর সামনে অভিজিৎকে তারা দেখে। সেখান থেকে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান অভিজিৎ। জঙ্গিরা ওই পর্যন্ত তাকে ফলো করে কিন্তু সেদিন তারা কিলিং মিশন সফল করতে পারে না। পরে ২৩ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্তও তারা অভিজিৎকে অনুসরণ করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি তারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুসারে তারা ঘটনার দিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। তাদের মূল অপারেশনাল হাউজ ছিল ধানমণ্ডিতে। অভিজিৎ হত্যায় রেকির দায়িত্বে ছিল সায়মন ও সোহেল রানা। এছাড়া শেষ দিকে হত্যাকারীরা সবাই রেকি করেছিল। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে মেজর জিয়া ও সেলিম নামে আরেকজন সহযোগী ছিল।
সিটিটিসি প্রধান মনির জানান, এ ধরণের মিশনের ক্ষেত্রে আনসার আল ইসলামের সেন্ট্রাল লিডাররা টার্গেটের তালিকা করে হাই কমান্ডে জমা দিত। তারপর হাই কমান্ড বিচার বিশ্লেষণ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো হত্যাকাণ্ড কিভাবে ঘটানো হবে। এসব কিলিং মিশনে দুইটি গ্রুপ কাজ করতো একটি ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ তারা রেকি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতো। আরেকটি গ্রুপ হচ্ছে কিলার গ্রুপ তারা কিলিং মিশন সফল করতো।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশের ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায়কে। এসময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আহত হন।
ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা বলছেন, মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগ। ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে সিটিটিসি এই মামলার তদন্ত শুরু করে।