বিএনপি ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবির যৌক্তিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে সরকার হটানোর নিরাপদ পথ খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে নগর উত্তর-দক্ষিণ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদের বলেন: একটি মতলবী মহল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে অযৌক্তিক পথে নেয়ার চক্রান্ত করছে। শিক্ষার্থীদের এ বিষয় নিয়ে নোংরা রাজনীতি করবেন না।
তিনি অভিযোগ করেন: বিএনপি কোটা আন্দোলনে ভর করতে ব্যর্থ হয়ে এখন তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করেছে। শিশুদের মিছিলে প্রবেশ করে একটা রাজনৈতিক মহল অশ্লীল – অশালীন স্লোগানের উস্কানি দিচ্ছে। আবার খাবার – পানি দিয়েও উস্কানি দিচ্ছে তীব্র হওয়ার জন্য, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা ধৈর্য ধারণ করে এই আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সরকার নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি। আমরা প্রো-এক্টিভ ছিলাম। শিক্ষার্থীদের সকল দাবিই আমরা মেনে নিয়েছি। নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর কালো ছায়া নেমে এসেছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে এই অবস্থা উত্তরণে তোমার শান্ত হও। আমরা তোমাদের প্রতিবাদী কন্ঠকে সম্মান করি। আশাকরি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে আমরা সকলের সহযোগিতা পাবো।
তিনি আরো বলেন: ঘটনার পর আশ্চর্য দ্রুততার সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করেছে। একজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে এখন কাষ্টডিতে আছে। এই ঘটনা কীভাবে হয়েছে তা গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি মনিটরিং করছে। তার নির্দেশনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। কোনো দুর্ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা একটি মূল বিষয় সেটা আমরা করেছি। এখানে কোনো গাফলতি বা উদাসীনতা ছিল না।
তিনি বলেন: প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন রমিজ উদ্দিন স্কুলের পাশে একটা আন্ডার পাস নির্মাণের যে দাবী সেটা পূরণে বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে। অবশ্য এর আগে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এর ডিজাইন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। সেনাবাহিনীর সে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী এই আন্ডার পাস নির্মাণের কাজ অচিরেই শুরু করতে যাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন আইনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরী। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনমন্ত্রণালয় আগামী সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন উত্থাপন করবে। এবং সেটি বিল আকারে পাস হবে। এরপরে এই সরকারের শেষ অধিবেশন সম্ভবত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এ আইনটি পাস হবে। শিক্ষার্থীদের দাবী পূরণে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কোনো প্রকার ঘাটতি নেই।
সরকারের এই মন্ত্রী বলেন: শিশুদের যৌক্তিক আন্দোলন যেনো কোনোভাবে অযৌক্তিক দিকে না যায় সে জন্য সবাই সচেতন থাকবো, সতর্ক থাকবো। তিনি বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে, শিক্ষকদের কাছে, অভিভাবকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা চাই। আমরা আশা করি আমরা সহযোগিতা পাবো। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন: আগুনের ভয়ে ভাংচুরের ভয়ে মারপিটের ভয়ে অনেক যানবাহন রাস্তায় নামছে না। আমি নিজেই গতকাল পর্যন্ত বিআরটিসির গাড়ি চালিয়েছিলাম। সে ড্রাইভাররা এখন জীবনের আশঙ্কায় নিরাপত্তার ভয়ে গাড়ি চালাতে চায় না। এই আন্দোলনে সারা যোগাযোগ ব্যবস্থায় কালো ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ গাড়ির অভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে সম্মান করি বলি, তোমার আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনের নেতা। তোমাদের কাছে অনুরোধ করতে চাই। তোমরা শান্ত হও। তোমরা দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের কাজে লাগাবে। উসকানীতে অবশ্য তোমরা বিভ্রান্ত হবে না। আমি ছাত্র-ছাত্রীর বক্তব্য শুনেছি। তাদের মধ্যে শুভবোধ আছে। এই শুভবোধ আমাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে। তা আমাদের কাজে লাগবে। প্লিজ সহযোগিতা করুন।
শোকের মাসে কেউ যেন চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য আমাদের নেতৃবৃন্দকে মনিটরিং করতে বলেছি। সতর্ক থাকতে বলেছি। বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানারে যেন শৃঙ্খলভাবে প্রদর্শন করা হয়। আগস্ট মাসের ভাবগাম্ভীর্য যেন নষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছি।