মার্চ, ১৯৮১। স্পেনজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো একটি খবর। বার্সা ফরোয়ার্ড এনরিক কাস্ত্রো কুইনি অপহৃত হয়েছেন! এমন খবরে সব ভেদাভেদ ভুলে মাদ্রিদ ভিত্তিক দলগুলো বার্সার পাশে দাঁড়ায়। বার্সা-রিয়াল এক সুরে কথা বলছে, সেই দিনগুলোতেও বিষয়টি অবিশ্বাস্য ছিল। কিন্তু কুইনির মুক্তির দাবি সব বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
এখনো শতবর্ষী ঐতিহ্য মেনে ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ তকমা ধরে রেখেছে বার্সা-রিয়াল। এক দলের মূল তারকা কোন কারণে ছিটকে পড়লে আড়ালে-আবডালে স্বস্তির হাসি হাসে অন্য দল। কিন্তু কুইনি ছিলেন সেখানে ব্যতিক্রম। গত মঙ্গলবার হার্ট অ্যাটাকে জীবন নদীর ওপারে পাড়ি জমানো এ ফুটবলারের ভয়ঙ্কর বিপদের সময় তার স্ত্রী নিয়েভেস পাশে পেয়েছিলেন স্পেনের সব ক্লাবকে।
স্পোর্টিং গিজন থেকে ১৯৮১ সালের গ্রীষ্মে তৎকালীন লা লিগার রেকর্ড ৮২ মিলিয়ন পেসোতে কুইনি পা ফেলেছিলেন ন্যু ক্যাম্পে। যেদিন অপহরণ হন, সেদিনও ম্যাচ খেলেছিলেন। হারকিউলিসের বিপক্ষে ৬-০ গোলে জয়ের ম্যাচে করেন জোড়া গোল।
ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে ওঠার সময় কুইনির বুকে বন্দুক ধরে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে মুক্তিপণ হিসেবে টেলিফোনে দাবি করা হয় ৭০ মিলিয়ন পেসো।
অপহরণকারীদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্যদিকে ক্রমেই ঘনিয়ে আসছিলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। পয়েন্ট টেবিলে বার্সার চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে তখন মাদ্রিদের অন্যতম জায়ান্ট দলটি।
ম্যাচের গুরুত্ব বিবেচনায় খেলা পেছানোর দাবি জানায় বার্সা। মানবিক দিক চিন্তা করে রাজি ছিল অ্যাটলেটিকোও। কিন্তু ফুটবলকে হারতে দেননি কুইনির স্ত্রী নিয়েভেস। তিনি জানতেন ম্যাচ না হলে জয় হবে অপহরণকারীদের। মৃত্যু হবে ফুটবলের আদর্শের। শেষ পর্যন্ত কুইনিকে ছাড়াই মাঠে গড়ায় ম্যাচ। সেই ম্যাচে বার্সা হেরে যায়।
সপ্তাহ দুয়েকের টানাপোড়নের পর মুক্তিপণ দিয়ে ২৫ মার্চ ছাড়া পান কুইনি। সেদিন ওয়েম্বলিতে প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় স্পেন। জাতীয় দলের খেলা না দেখে কুইনিকে এক নজর দেখতে তার বাসার সামনে হাজির হয় হাজারো স্পেনবাসী।
কুইনিকে রাখা হয়েছিল একটি গাড়ির গ্যারেজে। খেতে দেওয়া হত একটি স্যান্ডউইচ। অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে বার্সার হারা ম্যাচটি তাকে নিয়েই দেখে অপহরণকারীরা। যেদিন ঘরে ফেরেন, মুখে ছিল খোঁচা দাড়ি, চোখে অশ্রুজল। ক্লাবের প্রতি সমর্থনের ঊর্ধ্বে গিয়ে কুইনির কান্নায় কেঁদেছিল স্পেন।
পরে সুইজারল্যান্ডে অর্থ পাচারের সময় ধরা পড়ে তিন অপহরণকারী।
স্পেনের জার্সি গায়ে এখনো এক হয়ে যান বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা। কিন্তু ভেতরে ঠিকই স্বাধীনতা কিংবা ক্লাবের জন্য ভালোবাসা লুকিয়ে রাখেন খেলোয়াড় কিংবা সমর্থকরা। কিন্তু কুইনি যেটা করেছিলেন সেটা আর পারেননি কেউ কখনোই। এভাবে স্পেনকে এক করতে পেরেছিলেন বলেই এনরিক কাস্ত্রো কুইনি এখনো স্পেন তথা বার্সার কাছে এক ভালোবাসার নাম।