প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার সমঝোতা স্মারকটি নিয়ে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের কথা বার্তা বলছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে এটিকে ‘দেশ বিক্রির চুক্তি হিসেবে’ অভিহিত করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে এ নিয়ে তথ্য তুলে না ধরায় এ নিয়ে অপপ্রচারেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারতের সামরিক সমঝোতা স্মারকটি নিয়ে নানা কথাবার্তা হলেও এই সমঝোতা স্মারকে আসলে কী আছে- তা নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কোন কথা বলেনি। ফলে জনমনেও এ নিয়ে একটা ধোঁয়াশা আছে। ঢাকা ও নয়াদিল্লীর বিভিন্ন সূত্রে যোগাযোগ করে সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে দুই দেশের সামরিক খাতে ৬টি বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে :
(১) সামরিকখাতে ঋণ সহযোগিতা (লাইন অব ক্রেডিট)
(২) সামরিক সহযোগিতা
(৩) যৌথ প্রশিক্ষণ উদ্যোগ ও বিনিময়
(৪) প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা
(৫) প্রতিরক্ষা গবেষণা সহযোগিতা
(৬) উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা
(১) সামরিকখাতে ঋণ সহযোগিতার আওতায় ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহযোগিতা দেবে। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে যেকোন ধরনের সামরিক সরঞ্জামাদি কিনতে পারবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ এই ঋণের অর্থে ভারত থেকে বাংলাদেশ কোষ্টগার্ডের জন্য জাহাজ, আকাশ প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত সেন্সর এবং নৌবাহিনীর শিপইয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে।
(২) সামরিক সহযোগিতায় বলা হয়েছে, নিজেদের দক্ষতা এবং কর্মপরিধি অনুসারে আন্তর্জাতিক আইন, নিজ নিজ দেশের জাতীয় আইন ও পরিস্থিতির আলোকে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
(৩) যৌথ প্রশিক্ষণ উদ্যোগ ও বিনিময় সহযোগিতায় বলা হয়েছে, (ক) পারস্পরিক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সুবিধা অনুসারে দুই দেশ প্রশিক্ষণের জন্য সামরিক প্রতিনিধি প্রেরণ করবে।
(খ) দুই দেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে, প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষক, তথ্য পাঠ্যসূচী বিনিময় করবে।
(গ) সামরিক যন্ত্রপাতি রক্ষনাবেক্ষণে (যেখানে প্রয়োজন) দুই দেশ পারষ্পরিক সহযোগিতা দেবে।
(ঘ) সামরিক বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, সামরিক বাহিনীর জন্য ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, দুর্যোগ মোকাবেলা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
(ঙ) দুই দেশের মধ্যকার সামরিক ইস্যূ নিরসনে আলোচনার জন্য কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হবে। সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাৎসরিক ভিত্তিতে সভা অনুষ্ঠিত হবে।
(চ) পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে দুই দেশ নৌজাহাজ এবং এয়ার ক্রাফট ভ্রমণের আয়োজন করবে।
(ছ) পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে দুই দেশ আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানায় যৌথ নৌ মহড়ার আয়োজন করবে।
ঢাকার সূত্রগুলো অবশ্য বলছে, এর অধিকাংশই কোন না কোনভাবে এখনো অনুসৃত হচ্ছে। সমঝোতা স্মারকের ফলে এগুলো নিয়মিত এবং দাপ্তরিক কার্যক্রমের আওতায় চলে আসবে।
(৪) প্রতিরক্ষা শিল্পখাতের সহযোগিতায় যৌথ উদ্যোগের (জয়েন্ট ভেঞ্চার) মাধ্যমে পরষ্পরকে প্রতিরক্ষা শিল্পখাতে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সহযোগিতার আওতায় রয়েছে, স্পেস টেকনোলোজিতে সহযেগিতা, সমুদ্র অবকাঠামোর উন্নয়নে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কারিগরি সহযোগিতা। এতে বলা হয়েছে, উভয় দেশের নীতিমালা এবং নিরাপত্তাকে বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই এই সহযোগিতা হবে।
(৫) প্রতিরক্ষা গবেষণা সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এবং ভারত পরষ্পরকে সহযোগিতা করতে পারে। প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় এবং সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী প্রকোশলীদের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে এই সহযোগিতা হতে পারে।
(৬) উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা হিসেবে বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিরক্ষা সচিব পর্যায়ে বৈঠক করে সামরিক ইস্যূ নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে।
সৌজন্যে: নতুনদেশ