বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈরি পোশাক, সেবা, অবকাঠামো ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে চায় ভিয়েতনাম। ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণকে এক বিলিয়ন বা ১শ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
ভিয়েতনাম ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ভিয়েতনাম নিউজের বরাতে ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের আমন্ত্রণে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ত্রান দাই কুয়াং তিনদিনের সফরে রোববার বাংলাদেশে এসেছেন। আসার আগে তিনি বাংলাদেশি একটি গণমাধ্যমকে বাংলাদেশ সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি স্বাক্ষাতকার দিয়েছেন। ওই স্বাক্ষাতকারের বরাত দিয়ে ভিয়েতনাম নিউজ জানায়, ঐতিহ্যগত দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে ভিয়েতনামের অনেক মিল রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ভিয়েতনাম। তখন থেকেই ভিয়েতনাম বাংলাদেশের বন্ধু।
বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বাণিজ্য সম্পর্কে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে দুই দেশের বাণিজ্য বেড়েছে ৯০ কোটি বা প্রায় ৫০ শতাংশ। বাণিজ্যের এই পরিমাণকে ১শ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ভিয়েতনামের আমন্ত্রণে সেদেশ সফরে গিয়েছিল এফবিসিসিআইর একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি আসায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কি সুবিধা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চামড়া, পোশাক, অরগানিক মেডিসিন, পর্যটন, কৃষি ও আইটিসহ বেশ কয়েকটি খাতে ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য তাদের সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রযুক্তির দিক থেকে ভিয়েতনাম অনেক এগিয়েছে উল্লেখ করে শফিউল ইসলাম বলেন, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তাই আইসিটি পার্কে ভিয়েতনামকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। এছাড়া চামড়া শিল্পের উন্নয়নে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর (এমওইউ) হবে বলেও জানান এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা।
‘তবে বিদেশি বিনিয়োগ পেতে দেশের রাজনৈতিক সুষ্ঠৃু পরিবেশ, পর্যাপ্ত গ্যাস বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
এফবিসিসিআইর তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভিয়েতনামে রপ্তানি করেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। বিপরীতে আমদানি করেছে ৪১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। এই হিসাবে বাংলাদেশ ভিয়েতনামে ৩৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য কম রপ্তানি করেছে; যাকে বাণিজ্য ঘাটতি বলা হয়।
এই বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে ভিয়েতনামে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
দুই দেশের ব্যবসার উন্নয়নে একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হবে উল্লেখ করে শফিউল ইসলাম বলেন, কোন কোন খাতে যৌথ বিনিয়োগ করলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে সেই বিষয়গুলোই চিহ্নিত করাই হবে ওই কাউন্সিলের কাজ। আর সেই হিসাবেই হবে সরকারি, বেসরকারি বিনিয়োগ।
প্রযুক্তির ছোয়ায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ ও ডিজিটাল হতে যাচ্ছে; এখান থেকে ভিয়েতনামেরও কিছু শেখার আছে-এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া স্বাক্ষাতকারে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি বলেন, দারিদ্য বিমোচন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, লিঙ্গ সমতা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের জন্যে একটি সফল মডেল।
দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুটি পথ দেখিয়ে ত্রান দাই কুয়াং বলেন, প্রথমত, দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোকে উভয় বাজারে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই জন্য ব্যবসায়ীদের অনুকূলে নিয়ম তৈরি করা, ব্যবসায়ীক তথ্য বিনিময় ও বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ-ব্যবসা বাড়াতে ও পর্য টকদের সুবিধার্থে আকাশপথকে আরো সহজ করা।
এছাড়া কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য চাষে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে হলে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে চাষাবাদ, প্রজনন, উৎপাদন ও সংরক্ষণে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে বলে জানান ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি।
বাংলাদেশ সফরে তার সঙ্গে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দফতরের মন্ত্রীসহ ২০০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধির একটি দল রয়েছে।
৬ মার্চ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সাথে এফবিসিসিআইর একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের উপস্থিতিতে সেখানে কী নোট উপস্থাপন করবেন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি।