চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশের উন্নতির সব খবর রাখেন ওবামা: বার্নিকাট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের উন্নতির সব খবরই রাখেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। চ্যানেল আইয়ে সম্প্রচারিত ‘উইথ শাইখ সিরাজ’ অনুষ্ঠানে দু’ দেশের মধ্যে সম্পর্ক, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্ভাবনার পাশাপাশি নিজের শৈশব, বেড়ে উঠা, শিক্ষা ও পেশাগত জীবন এবং বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে তার ভাবনা, ভালো লাগা সব বিষয়েই কথা বলেছেন তিনি।

চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো:

শাইখ সিরাজ: সম্মানিত রাষ্ট্রদূত, চ্যানেল আই-এর স্টুডিওতে আপনাকে স্বাগতম। আপনার সাথে কথা বলতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত অনুভব করছি।
মার্শা বার্নিকাট:
আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

শাইখ সিরাজ: চ্যানেল আই-তে আসার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। শুরু করা যাক। আমরা আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার জন্মস্থান, শৈশব কোথায় কেটেছে?
মার্শা বার্নিকাট:
আমার জন্ম ও শৈশব কেটেছে নিউ জার্সিতে। জন্মস্থান রেডব্যাংক শহরে আর বেড়ে উঠেছি একটি মিলিটারি বেজ-এর কাছে। আমার ক্লাসের এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র তাদের পিতামাতার কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে স্কুল পাল্টাতে বাধ্য হতো। তাই আমি এমন সহপাঠীদের সাথে মিশেছি যারা ইউরোপ, জাপান এবং পুরো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করেছে। এই অভিজ্ঞতাটি ছিলো খুবই অদ্ভূত।

শাইখ সিরাজ: এবার আসা যাক, আমাদের মূল সাক্ষাতকারে। দক্ষিণ-এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মূল কৌশলগত অংশীদার বাংলাদেশ এবং প্রকৃত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত দীর্ঘদিন যাবত। এই দুই দেশের বন্ধনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মার্শা বার্নিকাট:
আমি খুবই গর্বিত যে, আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং এ সম্পর্ক পরস্পর সহযোগিতামূলক এবং অবশ্যই কার্যকরী। এই সম্পর্কটিকেই আমি বলতে চাই, ‘প্রকৃত অংশীদারিত্ব’।

শাইখ সিরাজ: ঠিকই বলেছেন।

মার্শা বার্নিকাট: যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা দু’টি দেশই অনেক অসাধারণ উন্নতি অর্জন করেছি। শুধু উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধেও লড়েছি। এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন থেকে শুরু করে দারিদ্র থেকে মানুষকে মুক্ত করতেও আমরা লড়াই করেছি একসাথে।

শাইখ সিরাজ: আমি একমত।
মার্শা বার্নিকাট:
আমাদের মূল্যবোধ একই এবং আমরা একে অপরকে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করি। দু’দেশের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। আর এসবই একটি দৃঢ় অংশীদারিত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি একটি বিষয় নিয়ে বেশ গর্বিত যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা বাংলাদেশের যাবতীয় উন্নয়ন সম্পর্কে খোঁজ রাখেন। যেমন গুটি ইউরিয়া’র যন্ত্রটি নিয়ে তার আগ্রহ অনেক বেশি। প্রেসিডেন্ট ওবামা’র অনেকগুলো উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হলো ‘ফিড দ্য ফিউচার’ প্রকল্পটি, যার মূল উদ্দেশ্য কেবল খাদ্য-নিরাপত্তা নয়, পুষ্টিও সমভাবে জরুরি। কিভাবে আমরা খাদ্য ব্যবহার করব সে বিষয়টিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

শাইখ সিরাজ: বলতেই হয় পুষ্টি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। মাননীয় রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ বিগত কয়েক দশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের জানা মতে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারী দেশগুলো সৌর প্রকল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। এই বিষয়ে আমাদের দর্শকদের কিছু বলবেন কি?
মার্শা বার্নিকাট:
আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের ফলে বিশ্বজুড়েই জ্বালানির চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। আমি সত্যি গর্বিত যে, বাংলাদেশের মানুষ সৌরশক্তি ব্যবহারে অন্যান্য দেশের থেকে অনেক দ্রুত এগিয়ে গিয়েছে। এবং অনেক দেশকে তারা পেছনে ফেলেছে।

শাইখ সিরাজ: বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির একটি আদর্শ ক্ষেত্র, তাই নয় কি?
মার্শা বার্নিকাট:
অবশ্যই। সৌরশক্তি নিয়ে ২০০০ সাল থেকেই আমরা বাংলাদেশের সাথে কাজ করছি। তখন গ্রামীণ শক্তি’র সাথে আমাদের একটি ছোট যৌথ প্রকল্প ছিল। যা পরে অনেক বড় হয় এবং এ প্রকল্পের আওতায় ৬৫,০০০ পরিবার ‘সৌরশক্তি’ ব্যবহার করার সুবিধা পায়।

শাইখ সিরাজ: এছাড়াও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকেও বায়োগ্যাসের প্রসার ঘটেছে।
মার্শা বার্নিকাট: যথার্থ বলেছেন আপনি। তবে সৌরশক্তি কৃষিকাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্প। আমরা একটি নতুন প্রকল্পে কাজ করছি, যেখানে বায়ুশক্তি ব্যবহার করার সুবিধা আছে, এমন স্থানগুলো নিয়ে একটি ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে যেসব উদ্যোক্তা বায়ুশক্তি ব্যবহার করতে চান, তারা সহজেই যেন জানতে পারেন কোন অঞ্চলে তা করলে ভালো ফল আসবে। ২০১৭ সালের মধ্যে এই ম্যাপিং-এর কাজ আমরা শেষ করতে পারবো বলে আশাবাদী।

শাইখ সিরাজ: যতদূর জানি, বাংলাদেশে নতুন উচ্চফলনশীল ও সহনশীল জাতের ফসল উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করছে, যা আপনাদের ‘কৃষি ও খাদ্য-নিরাপত্তা পরিকল্পনা’-এর আওতাভুক্ত।
মার্শা বার্নিকাট:
দেখুন যে দেশটিতে একসময় দুর্ভিক্ষ হয়েছে সে দেশটি এখন তিনগুণ বেশি ধান উৎপাদন করছে। এখন দেশটি চাল রপ্তানিও করছে।

শাইখ সিরাজ: এটি আসলেই এক বিরাট সাফল্য!
মার্শা বার্নিকাট:
বিশাল সাফল্যগাথা। ১৬ কোটি মানুষের জন্য আমাদের কৃষক খাদ্য উৎপাদন করছে, এবং আমরা নিজেরাই তা করছি। যা বলছিলাম, বাংলাদেশ এখন চাল রপ্তানিও করছে।

শাইখ সিরাজ: ঠিক। এ বছরই চাল রপ্তানি শুরু করেছি আমরা।
মার্শা বার্নিকাট: আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন।

শাইখ সিরাজ: ধন্যবাদ।
মার্শা বার্নিকাট: এটি নিঃসন্দেহে বিরাট সাফল্য। সেই সাথে বাংলাদেশ এখন ধানের নানা ধরণের বীজ মাঠে নিয়ে গেছে- লবণাক্ততা, বন্যা ও খরাসহিষ্ণু জাতগুলো এর ভেতর উল্লেখযোগ্য।

শাইখ সিরাজ: নারীর ক্ষমতায়নে এবং লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই অগ্রগতিকে কীভাবে মূল্যয়ন করবেন আপনি?
মার্শা বার্নিকাট:
এক্ষেত্রে মানব ইতিহাসে বাংলাদেশ অতুলনীয় রেকর্ড গড়েছে। সত্যিই এর তুলনা নেই। উনবিংশ শতাব্দীতে জাপান সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিলো। এটি একটি বিস্ময়কর অর্জন। সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। ছেলে এবং মেয়ে শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান’ও অনস্বীকার্য। এটি অনেক বড় একটি অর্জন। আর বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের পেছনে এ দেশের পোশাকশিল্পের অবদান’ও কম নয়।

শাইখ সিরাজ: ঠিক বলেছেন।
মার্শা বার্নিকাট:
এই খাতে কারা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে? নারীরা। কৃষিখাতের বিভিন্ন পর্যায়ে কারা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে? নারীরা। তার মানে দাঁড়াচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন দেশকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।

শাইখ সিরাজ: পোষাকশিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে কি আপনি কোন উন্নতি লক্ষ্য করেছেন, বিশেষ করে ২০১২ সালে নভেম্বরে তাজরিন ফ্যাশনে আগুন লাগার ঘটনা এবং ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার মতো বিপর্যয়ের পর? আপনার কি মনে হয় যে, জিএসপি সুবিধা (পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা) আবারও পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে?
মার্শা বার্নিকাট: বলতেই হচ্ছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনাটি আধুনিক শিল্প ইতিহাসে নজিরবিহীন। উৎপাদনকারী, ক্রেতা, সরকার, দাতা সংস্থা সবাই মিলিত হয়ে এই শিল্পকে আরও জোরদার করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা খেয়াল রাখছি এবং সাহায্য করতে চাই যাতে করে মধ্যস্থতা বজায় থাকে। জিএসপি’র ব্যাপারে বলছি, আমাদের যুক্তরাষ্ট্র ট্রেড প্রতিনিধি (যিনি এই জিএসপি প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন) বছরের পর বছর ধরে একটি বিষয় নিয়েই ভাবনায় আছেন, আর তা হল শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত কর‍া।

আমি মনে করি রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার চেয়েও বেশি মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে যে, ওই শ্রমিকরা জানত যে ভবনটি নিরাপদ নয় তাই তারা এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়। এরপরও তাদেরকে জোর করে নাজুক ওই ভবনের ভেতর পাঠানো হয়, বাধ্য করা হয় কাজ চালিয়ে যেতে। এই শ্রমিকদের প্রতিবাদ করার কোন ক্ষমতা ছিলো না। আমরা চাই শ্রমিকেরা যেন সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিয়ে চলতে পারে এবং তাদের মতামতও যেন গুরুত্ব পায়, বিশেষ করে নিরাপত্তা বিষয়ে। এবং যখনই তাদের সংগঠন থাকবে তাদের চাকরি হারানোর আশংকা থাকবে না। তখন শারীরিক নির্যাতনের ভয় দেখিয়েও কোন লাভ হবে না। তাদের প্রতিবাদের শক্তি ফ্যাক্টরিগুলোর কর্মপরিবেশেও যেমন উন্নয়ন আনবে, তেমনইসেই সাথে ফ্যাক্টরিগুলো আরও বেশি উৎপাদনশীল হয়ে উঠবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের অধিকার যখন আমরা নিশ্চিত করতে পারব, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড প্রতিনিধিকে সন্তুষ্ট করা অনেক সহজ হবে। খুব গুরুত্বপুর্ন আরেকটি বিষয় হল, শ্রম আইন প্রনয়ন ও প্রয়োগ, গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

শাইখ সিরাজ: বাংলাদেশের সুশাসনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা কীভাবে দেখছেন আপনি? একই সাথে টেলিভিশনে উন্নয়ন সংবাদ এবং অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রয়োজনই বা কতটা?
মার্শা বার্নিকাট: একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী গণমাধ্যম, যেমনটি বাংলাদেশে আপনাদের আছে, একটি দেশের অগ্রগতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং আমি জানি যে, প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সব ধরণের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ রেকর্ড ভেঙ্গে চলেছে। ফেসবুকে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস-এর পেজ-এ ভক্তের সংখ্যা সারা বিশ্বে অবস্থিত যেকোনো ইউএস দূতাবাসের থেকে অনেক বেশি এবং বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে।

শাইখ সিরাজ: সত্যিই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমার নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে ১২ ল‍াখের ওপর মানুষ যুক্ত রয়েছে।
মার্শা বার্নিকাট:
আমি চ্যানেল আই-এর ভীষণ ভক্ত। বিশেষ করে যে কৌশলে এই চ্যানেলটি বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে, যেভাবে তাঁদের জীবনের কথা তুলে ধরছে এবং তাদের পথ দেখাচ্ছে কীভাবে তারা আরও উন্নতি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে চ্যানেল আই’এর ভূমিকা অতুলনীয়। আমি মনে করি গণমাধ্যম নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে…

শাইখ সিরাজ: স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে…
মার্শা বার্নিকাট: পুষ্টি…

শাইখ সিরাজ: প্রকৃতি সংরক্ষণ..
মার্শা বার্নিকাট: জলবায়ু’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, জনসেবামূলক ঘোষণাগুলোও অনেক কাজে আসতে পারে। আপনার অবদানের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।

শাইখ সিরাজ: ধন্যবাদ মাননীয় রাষ্ট্রদূত। অনেক বাংলাদেশী আমেরিকায় পড়তে যেতে চায় আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের জন্য ভিসা পাওয়া কি কষ্টসাধ্য? তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মার্শা বার্নিকাট:
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা প্রবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ২৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। ৫০০০ এরও বেশি বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ছে। সম্প্রতি অনেক শিক্ষার্থীই ভিসা পেয়েছে। কীভাবে এটি সম্ভব হয়েছে? বারিধারায় আমাদের আমেরিকান সেন্টার আছে, ধানমন্ডিতে ইএমকে সেন্টার এবং চট্টগ্রামেও একটি আমেরিকান সেন্টার আছে যেখানে সম্পূর্ণ অফিশিয়াল স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং সেবা দেয়া হয়, যার নাম এডুকেশন ইউএসএ। সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই, কিভাবে অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এমন কি, আর্থিক সহযোগিতা কিভাবে নেওয়া যায় সব কিছুরই সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদান করা হয়। সর্বোপরি, আমরা চাই যে, সবাই আমাদের দেশে আসুক, বিনিয়োগ করুক। আর অবশ্যই বিদেশী শিক্ষার্থীদের চাই আমরা। এরাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধ করে। তাঁরা অনেক কিছুই অর্জন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে জানায় ।

শাইখ সিরাজ: প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিছুদিন আগেই কেনিয়াতে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল এন্ট্রপ্রেনারশিপ সামিট’-এ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহারের বেশ প্রশংসা করেন, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং নিত্যদিনে প্রযুক্তির ব্যবহারের দেশটির সাফল্যের কথা তুলে ধরেন সামিটে। প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের এই উন্নতি আপনি কীভাবে দেখছেন?
মার্শা বার্নিকাট:
এক্ষেত্রে প্রথমত আমি বলতে চাই, মোবাইল ব্যাংকিং’এর কথা। এর কারণে দৈনন্দিন জীবন অনেক সহজ হয়েছে এবং বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষ বেশ উপকৃত হচ্ছে। এটি প্রশংসনীয়। আপনি নিশ্চয়ই ইউটিউব ব্যবহার করেন?

শাইখ সিরাজ: জ্বি, অবশ্যই। ২০ লাখেরও বেশি সংখ্যক ভিডিও ভিউ আছে আমার ইউটিউব চ্যানেলে।
মার্শা বার্নিকাট:
ইউটিউব-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান। কিছুদিন আগেই প্রিন্সটনের একটি পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাদলের নেতৃত্ব দেন আরেকজন বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিক। তিনি একটি ‘নন-পার্টিকেল’ আবিষ্কার করেন। আমি ব্যাপারটি সঠিকভাবে বুঝাতে পারছি না কেননা আমি ইতিহাস নিয়ে পড়েছি। শুধু এতটুকুই বলতে পারি যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই আবিষ্কার বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে খুব শিগগিরই।

শাইখ সিরাজ: আমাদের দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্তত ১০ কোটির’ও বেশি।

মার্শা বার্নিকাট: একদম সঠিক। এবং এ কারণে সবাই এখন তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছে খুব সহজেই। আপনার টেলিভিশন চ্যানেলের তথ্যও এখন ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে। প্রযুক্তি এখন বাংলাদেশের সবার জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।

শাইখ সিরাজ: ড্যান ডব্লিউ মজীনা, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার একজন ভালো বন্ধু এবং বাংলাদেশেরও একজন প্রকৃত বন্ধু। তিনি পুরো বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। কৃষি উন্নয়ন ও গ্রাম-বাংলা দেখতে আমরা একসাথে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গিয়েছি। আমি কি আশা করতে পারি যে, আপনিও আমার সাথে যাবেন যাতে আমি বাংলাদেশের উজ্জীবিত এবং সংগ্রামী কৃষকদের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। এরাই কিন্তু আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির মূল শক্তি।
মার্শা বার্নিকাট:
রাষ্ট্রদূত মজীনা এবং আমার বন্ধুত্ব ২০ বছরের বেশি। আমি মজীনার মতো কৃষক পরিবারে বেড়ে না উঠলেও আমার নানা-নানি কৃষক পরিবারের ছিলেন। তাই এই দেশের ও আমার দেশের কৃষিখাত আমার খুব কাছের এবং প্রিয়। আপনার সাথে ঘুরে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রের এবং কৃষকের উন্নয়ন দেখার ব্যাপারে আমি দারুণ আগ্রহী। কৃষকের অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার কাছ থেকেও জানতে চাই আমি। প্রবৃদ্ধি অর্জন কেবল শিল্পক্ষেত্রেই অর্জিত হয়নি, বরং সেবা এবং কৃষি খাতের ভূমিকার কথা ভুলে গেলে চলবে না।

শাইখ সিরাজ: সঠিক বলেছেন আপনি। আমরা আসলে সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় অনেক এগিয়ে।
মার্শা বার্নিকাট:
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ও সাফল্যে কৃষকদের অবদান দেখেই তা টের পাওয়া যায়।

শাইখ সিরাজ: মাননীয় রাষ্ট্রদূত, আপনি বিগত ৫ মাস ধরে বাংলাদেশে আছেন। বাংলাদেশ আপনার কাছে কেমন লাগছে? এবং আপনি আপনার এই কাজটি কতটা উপভোগ করছেন?
মার্শা বার্নিকাট:
প্রথম যেদিন আমি বাংলাদেশে পা রাখি সেদিন থেকেই আমার মনে হয়েছে যেন আমি আমার বাড়িতেই এসেছি। রাষ্ট্রদূত মজীনাও আমাকে সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমনকি এর আগেও যে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতই এখানে এসেছেন, তাঁরাও একই কথা বলেছেন। ‘আপনি যদি বাংলাদেশে আসেন তবে এ দেশটি আপনাকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করবে’, বলেছেন তারা। বাংলাদেশকে জানার জন্য, দেখার জন্য আমি অনুরোধ করব সবাইকে। গোটা আমেরিকায় প্রায় ৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছে এবং বাংলাদেশেও আমেরিকানদের সংখ্যা বাড়ছে। লক্ষাধিক ট্যুরিস্ট ও শিক্ষার্থী দু’দেশেই আছে। আসলে দু’দেশের ভেতর প্রকৃত বন্ধন বলতে এই বুঝি আমি।

শাইখ সিরাজ: আমি আপনার সাথে একমত। সম্মানিত রাষ্ট্রদূত, আমি খুবই আনন্দিত ও সম্মানিত অনুভব করছি, আপনাকে আমাদের সাথে পেয়ে। আমরা আপনার শৈশব, পড়াশোনা ও অনেক কিছুই আজকে জানতে পারলাম আপনার কাছ থেকে। আশা করি আপনাকে আবারো পাবো আমাদের মাঝে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মার্শা বার্নিকাট:
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমি বেশ আনন্দিত এখানে আসতে পেরে।