‘বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন’ উল্লেখ করে জার্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে প্রতিবেদন করেছে তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন দু’জন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। ‘বাংলাদেশকে স্বৈরতান্ত্রিক বলা কতটুকু যৌক্তিক’ এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘ওই প্রতিবেদন মর্মান্তিক হলেও বাস্তব।’ তবে এই প্রতিবেদনকে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ।
শুক্রবার জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং সেখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড মানা হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন: ‘এই প্রতিবেদন মর্মান্তিক এবং দূর্ভাগ্যজনক।’ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নিজের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর জন্যই কি আমরা এতো সংগ্রাম করলাম?’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন: ‘যাদের জন্য এই অবস্থা তাদের মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সমাবেশ মিছিল করছে!’
তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিক থেকে প্রতিবেদনটিকে বিশ্লেষণ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ। তার মতে, ‘বিশ্বের সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশ।’
প্রতিবেদনটিকে ‘বাংলাদেশ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তির চক্রান্ত’ বলেও তিনি অভিহিত করেন। বলেন, ‘‘আরও স্পষ্ট করে বললে, এটা বিএনপির কাজ। বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে তারা বাংলাদেশ বিরোধী অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”
খালেদা জিয়ার আইনি পরামর্শক হিসেবে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইলের নিয়োগ পাওয়ার প্রসঙ্গ আনেন তিনি। বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বনকারী কার্লাইলকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে লবিস্ট নিয়োগ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য তারা এই প্রতিবেদন করিয়েছে।’’
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালায় বেরটেলসম্যান স্টিফটুং। সেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং উগান্ডার কথা।
রিপোর্টে বলা হয়: ‘এই পাঁচটি দেশ এখন আর গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পর্যন্ত মানছে না। এসব দেশে বহু বছর ধরেই গণতন্ত্র ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।
এসব দেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই এটা ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয় ওই রিপোর্টে।
এ প্রসঙ্গে এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন: ‘গণতন্ত্র, সুশাসন, সুনীতি না থাকলে রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় অন্যরকম হয়ে যায়। এই পরিচয়ের শব্দগুলো অনেক শক্ত হয়ে গেলেও একে স্বৈরতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিবাদসহ অনেক নামেই অভিহিত করা যায়।’
তিনি বলেন: ‘দেশ অনেক ক্ষেত্রে উন্নত হচ্ছে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে সুশাসন, সুনীতির ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এতে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরীব আরও গরীব হচ্ছে।’
বিশ্বের ৫ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আসায় হতাশা প্রকাশ করলেও তরুণদের উপর আস্থা রাখছেন ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ। বলেন, ‘এখন তরুণ সমাজের উপরই আমার ভরসা। তরুণরাই পারে আমাদের এই অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটাতে।’