সাউথ আফ্রিকার অলরাউন্ডার আন্দিলে ফেলুকোয়ওর বিপক্ষে বর্ণবাদী মন্তব্য করে বিপাকে ছিলেন সরফরাজ আহমেদ। তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। কৃতকর্মের জন্য মাফ চান পাকিস্তান অধিনায়ক নিজেও। ফেলুকোয়ওর কাছে ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষমা চেয়েছিলেন।
তবে তাতেও মুক্তি মিলল না। চার নিষিদ্ধ হয়েছেন সরফরাজ। রোববার ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি মিলিয়ে তাকে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি।
নিষিদ্ধ হওয়ায় রোববারের চতুর্থ ওয়ানডে ও সিরিজের পঞ্চম এবং শেষ ম্যাচে খেলতে পারবেন না সরফরাজ। একইভাবে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটিতেও দলে থাকতে পারবেন না তিনি।
ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাওয়ায় সরফরাজকে ক্ষমা করেছিলেন ফেলুকোয়ও। নিজেরা কোনও কথা না বলে বিষয়টি আইসিসির উপর ছেড়ে দিয়েছিল সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাই রায় দিল।
পাকিস্তান-সাউথ আফ্রিকার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ চলার সময় সরফরাজের করা মন্তব্য স্টাম্প মাইকে ধরা পড়ে। শাহিন শাহ আফ্রিদির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ইনসাইডএজ হয়ে কোনমতে বেঁচে যান ফেলুকোয়ও। তখনই উইকেটের পেছনে থাকা সরফরাজ বাজে মন্তব্য করেন।
ফেলুকোয়ও আউট না হওয়ায় সরফরাজ বলেন, ‘আবে কালে, তেরি আম্মি আজ কহন বহেন হায়? কি পারওয়া ক আয়ে হ্যায় আজ?’
যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘আরে কালো ম্যান, তোমার মা আজ কোথায় বসে আছেন? তুমি কি তাকে তোমার জন্য প্রার্থনা করতে বললে?’
এই ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে পিসিবি। বিবৃতিতে পাকিস্তান বোর্ড জানায়, ‘সরফরাজ আহমেদের মন্তব্যের জন্য পিসিবি দুঃখ প্রকাশ করছে। পিসিবি এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য যেকোনো ঘটনাকে সমর্থন করে না বা সমর্থন দেয় না এবং বর্ণবাদী মন্তব্যর বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। তাতে যা-ই হোক না কেন।’
সরফরাজের এই মন্তব্যের পর স্বভাবতই ক্রিকেটবিশ্বে উঠে ঝড়। সরফরাজকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সাবেক পাকিস্তান তারকা শোয়েব আখতার জানান ফেলুকোয়ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত পাকিস্তান অধিনায়কের। ক্ষমা চেয়ে নেন সরফরাজও। তিনি টুইট করে লেখেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। ম্যাচের ওরকম পরিস্থিতিতে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি।’
তবে ক্ষমা চেয়ে যে মাফ পাচ্ছেন না সরফরাজ সেটা আগেই বলা হচ্ছিল পাকিস্তানি মিডিয়ায়। এই ঘটনা পাকিস্তান দলে বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে, এমনকি প্রোটিয়া সফরের বাকি সময়টা সরফরাজকে ছাড়াই খেলতে হতে পারে তাদের, এমনটাই বলেছিল সেদেশের মিডিয়া। শেষ পর্যন্ত হলও তাই।
কারণ, আইসিসির বর্ণবাদবিরোধী আইন অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় বা সহায়তা কর্মী প্রথমবারের মতো এমন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে চার থেকে আট ম্যাচ স্থগিতাদেশের শাস্তি পাবে, চার থেকে আটটি ওয়ানডে বা টি-টুয়েন্টি ম্যাচে এই স্থগিতাদেশ পেতে পারে।
পাকিস্তানের জিও টেলিভিশনের অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তিন থেকে পাঁচ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন সরফরাজ। সেক্ষেত্রে সিরিজের বাকি সময় দলকে নেতৃত্বে দিতে পারেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। চতুর্থ ম্যাচে মালিকই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এখন ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। ওয়ানডে সিরিজ শেষে তিন ম্যাচে টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলবে সাউথ আফ্রিকা-পাকিস্তান।