বন্ধ হয়ে যাওয়া পোল্ট্রি খামারে গড়ে উঠেছে কোয়েল পাখির খামার। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এক নজির গড়েছেন নীলফামারী জেলার বনবিভাগ পাড়ার মমতাজ উদ্দিন এবং কমলা বেগম। এই খামারি দম্পতির সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক কোয়েল খামার গড়ার সুযোগ পেয়েছেন নীলফামারীসহ আশপাশ কয়েক জেলার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বসে থাকা বহু পোল্ট্রি খামারি।
অথচ কয়েক বছর আগেও ওইসব খামারগুলোতে পালন হতো ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগী। কিন্তু একদিনের বাচ্চা ও খাদ্যের দামের সঙ্গে বাজার মুল্যের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় একের পর এক ওইসব খামার।
নীলফামারী জেলা সদরের গৌরগ্রাম কীর্তনিয়া গ্রামের কোয়েল খামারি প্রফুল্ল কুমার বলেন, গত কয়েক বছর যাবত পোল্ট্রি খামারের শেডটি খালি পড়ে ছিল। একদিন মমতাজ উদ্দিন এসে জানাল যে, বন্ধ খামার ফেলে না রেখে যদি কোয়েল পালন করি তাহলে কিছু লাভ ঘরে আসবে। তারপর শুরু করেছিলাম। এখন আমার খামারে প্রায় ১ হাজার কোয়েল আছে। যা পালন করে প্রতিবারই কিছু না কিছু লাভ ঘরে আসছে। পোল্ট্রির মতো না হলেও, এটি কম লাভজনক নয় বলে জানাচ্ছেন এই এলাকার একাধিক খামারি।
কোয়েল খামারি মোজাম্মেল হক বলেন, ব্রয়লার বা লেয়ারের থেকে কোয়েলের রোগবালাই কম হয় বলে এতে লোকসান গুণতে হয় না। ফলে এলাকার পরিত্যেক্ত পোল্ট্রি খামারিা কোয়েল পালনে ঝুঁকছে। পোল্ট্রি খামারিদের ঘুরে দাঁড়ানোর এই পথ দেখিয়েছেন মমতাজ উদ্দিন এবং তার স্ত্রী কমলা বেগম। গত সাত আট বছর ধরে তারা কোয়েল খামার গড়ে এনেছেন আর্থিক সাফল্য ও পারিবারিক সম্পদ। একইসঙ্গে তাদের সফলতার উদাহরণ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে গোটা এলাকার মানুষের মধ্যেই সৃষ্টি করেছেন নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন।
মমতাজ উদ্দিন বলেন, এক সময় চরম বেকারত্বের সাথে সংগ্রাম করতে গিয়ে চিন্তা করি কোয়েল পালন করা কথা। ২০০৭ সালে প্রথমে শুরু করেন মাত্র ৫শ কোয়েল দিয়ে। এখন তার খামারে দশ হাজার কোয়েল পালন হচ্ছে। এছাড়াও কোয়েলের হ্যাচারি করে বাচ্চা উৎপাদন করছেন। নিজে যখন সফল হলেন তখন ভাবলেন, এলাকার ধ্বংস প্রায় পোল্ট্রি শেডগুলোকে কাজে লাগানোর কথা। একে একে এখন প্রায় দেড়শ খামারে কোয়েলের বাচ্চা প্রদান, আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। বলেন, তার নিজের খামারটি দেখেন স্ত্রী কমলা বেগম। আর বিভিন্ন জায়গায় যেসব খামারে বাচ্চা সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলি দেখভাল করেন তিনি।
হ্যাচারিসহ কোয়েল খামারের সব ধরনের কাজের সাথে দিনরাত সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে একজন সফল নারী দাবি করেন মমতাজের স্ত্রী কমলা বেগম। সঠিক নিয়ম মেনে কোয়েল খামার করেও যে আর্থিকভাবে সফল হওয়ায় যায় এই দৃষ্টান্তটি উত্তরাঞ্চলের বহু মানুষের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যা পোল্ট্রি খাতে ক্ষতিগ্রস্থ অন্যান্য এলাকাগুলোর জন্যও হতে পারে অনুসরণীয়।