কালজয়ী অসংখ্য বাংলা গানের শিল্পী এন্ড্রু কিশোর মারা গেছেন। এমন খবর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বিখ্যাত সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান।
সোমবার সন্ধ্যায় এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে, ফোন ধরেই কাঁদতে শুরু করে দেন আলম খান। যে কান্না আপনজন হারানোর, প্রিয় মানুষকে হারানোর!
কাঁদতে কাঁদতে এই সংগীতজ্ঞ বলেন, এতো দ্রুত আমাদের ছেড়ে এন্ড্রু চলে যাবে, ভাবতেও পারিনি। ভেবেছিলাম সুস্থ হয়েই ফিরবে! কিন্তু এটা কী হয়ে গেলো! বয়সে আমাদের কতো ছোট, কতো স্মৃতি আমাদের একসাথে।
চলচ্চিত্রের গানে টানা কয়েক দশক ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো এন্ড্রু কিশোরের। সত্তরের শেষ দিকে প্লেব্যাকে আসাও সুরকার আলম খানের হাত ধরে। ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে একটি গান গেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর।
আলম খানের সুরে বহু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। সেসব স্মৃতি মনে করে ফোনে বারবার থমকে যাচ্ছিলেন আলম খান। ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুসের মতো গান তাঁর সুরে গেয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত এই শিল্পী!
আধুনিক বাংলা গানের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। একই সঙ্গে তাঁর চলে যাওয়া বাংলা চলচ্চিত্রের গানের জন্যও অপূরণীয় ক্ষতি! বছিলেন আলম খান।
তিনি আরো বলেন, কতো কতো জনপ্রিয় কাজ আমরা একসাথে সৃষ্টি করেছি। আমরা সৃষ্টিশীল মানুষরাতো কাজের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। আশা করবো, রেখে যাওয়া অসংখ্য গানে এন্ড্রু বাংলার মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন।
শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে এন্ড্রু কিশোর অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কয়েক মাস ধরে সেখানে তার চিকিৎসা চলে। দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসায় শিল্পীকে সহায়তা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা শুরুর কয়েক মাস তাঁর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও শেষ দিকে এসে আবার অবনতি হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে করোনার এই সংকট সময়ের মধ্যেই গেল মাসের ১১ তারিখ দেশে ফেরেন তিনি।