Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

ফেলানি, তুই আবার জন্ম নিলে শঙ্খচিল শালিকের বেশে আসিস

দেশের বাইরে আমার তেমন একটা যাওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ দৌড় কোলকাতা। সড়ক পথে প্রথম যখন ভারতের মাটিতে পা রাখলাম তেমন কোন পরিবর্তন চোখে পড়েনি। বই-পুস্তক আর সিনেমার কারণে ভারতীয় যে কোন নাগরিকের চেয়ে বেশি ছাড়া কম জানি না ওই দেশটি সম্পর্কে। সবাই বাংলায় কথা বলছেন। আপন মনে হওয়ার সম্ভবতঃ ওটাই প্রধান কারণ ছিলো। কারণ ছিলো আরো ঢের। বইয়ের দোকানে থরেথরে যে বইগুলো সাজানো ছিলো তার লেখক আমার বড্ড আপনজন। সিডির দোকানে যে কণ্ঠ বাজছিলো সেতো আমারই প্রিয় শিল্পী।

রাস্তায় বড় বড় বিলবোর্ডে যে তারকাদের ছবি, তারা আমার পরিবারের সদস্যের মতই। আমার বাপ চাচা না হলেও নিশ্চিতভাবে বলা যায় দাদা ভারতবর্ষের নাগরিক ছিলেন। এতো তো আপনার চেয়েও আপন। মহা আনন্দে নিজের গচ্ছিত সব টাকা খরচ করেছি। পছন্দ সই পণ্য কিনেছি।

ফেরার পথে হঠাৎ আমার ভেতরে এক ধরনের ভয় জেঁকে বসলো। আমি তো সড়ক পথে বাড়ি ফিরছি। যদি কেউ আমাকে গুলি করে! বুলেট কি চিনতে পারে পাসপোর্ট-ভিসা? বুলেট যদি আমাকে গরু ব্যবসায়ী ভেবে বসে!

ঠিক বর্ডারে এসে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। বিএসএফ এর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব ছোট আর অসহায় মনে হচ্ছিলো। প্রথম দফায় কী বললো যেন শুনতেই পেলাম না। দ্বিতীয় দফায় কাঁপাকাঁপা হাতে পাসপোর্ট বাড়িয়ে দিলাম। সীমান্ত রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য যখন আমার পাসর্পোট চুলচেড়া বিশ্লেষণ করছিলেন আমি তখন ওর মুখটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম অবিকল আমাদের মতো। শ্যামবর্ণ ডানে সিঁথি করা অল্প বয়স্ক একটি ছেলে। দেশে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় বেরুলে এমন কতো মানুষের সাথে দেখা হয় আমার। অথচ ওই ছেলেটিকে আমার প্রচণ্ড ভয় লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো এই কি অমিয় ঘোষ? আবার মনে হচ্ছিলো, না-না এ না।

বেশ কিছু প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শেষে আমি দেশের মাটিতে পা রাখলাম। বারবার পেছন তাকাতে ইচ্ছে করছিল, কেউ কি আমার দিকে বন্দুক তাক করে আছে? আবার সাহসও পাচ্ছিলাম না যদি বিরক্ত হয়ে কোন জোয়ান ছুঁড়ে দেয় একখানা বুলেট! বুলেট কি চিনতে পারতো আমাকে? আমি কি বুলেটকে বলার সুযোগ পাবো আমার কাছে পাসপোর্ট আছে ভিসা আছে।

ঠিক তখনই এক ঝাঁক বাংলাদেশি পাখি আমার মাথার ওপর দিয়ে ভারতে উড়ে গেলো। আমি অবাক বিশ্বয়ে তাকিয়ে দেখলাম পাখির কোন পাসপোর্ট ভিসা লাগলো না।

আহারে ফেলানি তুই যদি পাখি হতি, হয়তো তোকে চার ঘণ্টা ধরে ঝুলে থাকতে হতো না কাঁটাতারে। সাত বছর ধরে ঝুলে থাকতো না বিচারের নামে প্রহসন। ফেলানি তুই বড্ড বোকা ছিলিরে। একে তো জন্মেছিলি ছোট দেশে, তারমধ্যে গরিবের ঘরে। এই ভুল আর করিস না। আবার এলে জীবনানন্দের কবিতার মতো হয়ে আসিস এই বাংলায় শঙ্খচিল শালিকের বেশে। ও না রে, জীবনানন্দের কথায় তুই আবার ভারতীয় হয়ে যাবি নাকি বাংলাদেশের হবি! ঠিক বুঝছি না। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।

ফেলানি তুই মরে বেঁচে গেছিস। আর আমি মরার মতো বেঁচে আছি। সারাদিন বসে বসে সীমান্তে কাঁটাতার বুনি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Exit mobile version