ম্যানচেস্টার থেকে: বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচের আগের সন্ধ্যায় পড়িমরি করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের হোম ভেন্যুর মেগা স্টোরে ঢুকলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। সঙ্গে ভারতীয় কয়েকজন বন্ধু। তারা এই ক্রিকেটারকে এমনভাবে ঘিরে রাখলেন, কেউ যেন দেখতে না পায়! চিনে গেলেই তো ভক্তদের অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফের আবদার মেটাতে হবে।
উপমহাদেশ হলে কথা ছিল, ইংল্যান্ডে এসে তাও আবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্লাব ভেন্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে এমনটা ভাবা যে বোকামো হয়ে গেছে সেটা বুঝতে সময় লাগেনি তাদের কারোরই! বন্ধুদের অন্য কাজে ব্যস্ত করিয়ে দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মতোই কেনাকাটা সেরেছেন চাহাল।
ভেবেছিলেন, ম্যানইউর লালরঙা জার্সি কিনেই বেরিয়ে যাবেন। কিন্তু এখানে যে এত কিছুর সম্ভার একটু ঘুরেফিরে বোঝার পর মুগ্ধতায় যেন ক্রিকেটার পরিচয় ভুলে বসার যোগাড় তার!
একবার কেনা শেষ! কিন্তু না। গেটের সামনে গিয়ে আবারও ফিরে আসেন। আরও কিছু নিতে হবে। হাত বোঝাই করে শেষমেশ ট্রলি টেনে নিতেই হল। ধীরে ধীরে তা উঁচু হয়ে উঠল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের অফিসিয়াল পণ্যে। সকার জার্সি, টি-শার্ট, শটস, জুতা, নেকটাই, ব্যাগ, ক্যাপ, চাবির রিং, মগ আরও কত কি! উপহার দেয়ার মতো অন্তত একশ আইটেম রাখা সেখানে। বেশিরভাগই লাল রঙের। সঙ্গে লোগো ও ক্লাবের নাম তো আছেই।
বাইরে থেকে স্টেডিয়াম চত্বর এতটাই চাকচিক্য যে ভেতরের মাঠটা দেখার আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠবে। মন চাইবে দৌড়ে চলে যাই মাঠে। তবে কাজটা মোটেও সহজ নয়। ২৭ পাউন্ড (টাকায় ৩ হাজার) পাউন্ড খরচ করে আগেভাগেই টিকিট কেটে ফেলতে হবে। স্টেডিয়ামের মিউজিয়াম দেখতে গেলে সেখান থেকেই দেখা যাবে সবুজাভ ফুটবল মাঠ আর লাল গ্যালারি।
বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল কাভার করতে ম্যানচেস্টারে আসা সাংবাদিকরাও দলে দলে যাচ্ছেন ফুটবল ক্লাবটির ভেন্যুতে। শুধু বাংলাদেশ নয়। সব দেশের সাংবাদিকরাই কাজ শেষ করে ঢু মারছেন সেখানে।
পাউন্ড সঙ্গে থাকলেই ম্যানইউ’র বিশালতা দেখা যাবে, জানা যাবে এমনটাও নয়। আগ্রহভরে এসে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাওয়া দর্শনার্থীর সংখ্যাও হয়ে যায় প্রচুর।
৫-৬টা টিকিট বিক্রি হলে একজন গাইড দর্শনার্থীদের নিয়ে প্রবেশ করেন স্টেডিয়ামের ভেতরে মিউজিয়ামে। প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ মানুষ আসেন ছোট ছোট গ্রুপে সেশন ধরে।
ফুটবল নিয়ে মাতামাতি থাকলেও ক্রিকেট নিয়ে স্বাভাবিক জোয়ারটা নেই এখানে। ইংল্যান্ডের অন্যান্য শহরে যেমন ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষই জানেন ক্রিকেট বিশ্বকাপ হচ্ছে। কে কেমন করছে সেটিও বলে দিতে পারেন কেউ কেউ।
ম্যানচেস্টারে নেই তার ছিটেফোঁটাও। ফুটবল নিয়ে তারা এতটাই মত্ত যে ক্রিকেটের কথা বলতে যেন তাদের মুখ আটকে আসে! অথচ ওল্ড ট্রাফোর্ড ফুটবল গ্রাউন্ড আর ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাঝে পায়ে হাঁটা দূরত্ব। তবুও ফুটবল আর ক্রিকেট এখানে দুই মেরুতে।
এখানকার ক্লাব ফুটবলের ইতিহাস আর ঐতিহ্য এতটাই সমৃদ্ধ যে অন্যসব কিছু যেন নস্যি। ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে ৫ মাইলের দূরত্ব ইতিহাদে গেলে আরেক ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। এই দুই বিশ্ববিখ্যাত ক্লাব আছে বলেই এখানে ফুটবলের এত উন্মাদনা।
এখানে ক্রিকেট জোয়ার কেবল ভারতীয় সমর্থক-নির্ভর। তারাই মাতিয়ে রাখছেন স্টেডিয়াম এলাকা। বৃষ্টি-বিঘ্নিত দিনে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গ্যালারিতে ৯৫ ভাগ দর্শকই ছিল ভারতীয়। অভিবাসী এবং ভারত থেকে খেলা দেখতে আসা সমর্থকরাই হোটেল, রেস্তোরা, পাব মাতিয়ে রেখেছেন। তাদের দেখলেই কেবল বোঝা যায় ম্যানচেস্টারে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হচ্ছে।
ইংল্যান্ডে খেলার চ্যানেল রাখতে হলে প্রচুর পাউন্ড খরচ করতে হয়। ধনীদের বাসাতে থাকে খেলা দেখার ব্যবস্থা। যে কারণে কিছু কিছু পাব খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করে বেঁচা-বিক্রি বাড়ানোর আশায়। বিশ্বকাপের সময় অন্যান্য শহরে স্কাই স্পোর্টসে ক্রিকেট দেখানো হলেও ম্যানচেস্টারে ফুটবল দিয়ে টানা হচ্ছে ক্রেতা।