প্রযুক্তিগত দিক থেকে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি অদক্ষ অবস্থায় রয়েছে। এরপরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংক এবং ইসলামিক ব্যাংক।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ‘৭ম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন ২০১৮’ এর অনুষ্ঠানে ব্যাংক বিষয়ক গবেষণা পত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে ইউনিভার্সিটি মালয়শিয়া পারলিস’র অধ্যাপক রোসনি বাকারের তত্বাবধানে “ডু প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকস আউটপারফর্ম স্টেট ওউন্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক? ইমপিরিক্যাল ইভিডেন্স ফর্ম বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
প্রবন্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের (সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন এবং ইসলামিক) পারফরমেন্স মূল্যায়ন করে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে বেশি অদক্ষ সরকারী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। এরপরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংক এবং ইসলামিক ব্যাংক।
সভায় খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ সংক্রান্ত অন্য একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ঋণ বিতরণে সর্তক পরিকল্পনা, কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ব্যাংক পরিদর্শন এবং মূলধন পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা- এসব বিষয় যাচাই করতে বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ব্যাংকিং খাতেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পারদর্শীতা অর্জন করা জরুরী। তাছাড়া উন্নতির ধারা বজায় রাখতে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকিং খাতে উন্নতির পেছনে বিআইবিএম গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে আসছে। বিআইবিএমের গবেষণা এবং তথ্য অনুসন্ধান ব্যাংকিং খাতে নতুন ধারণা তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
এজন্য সংশ্লিষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সভায় ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হয়। এদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রায় সব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ডাটা হ্যাকড হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে এখনও শক্তিশালী হয়ে উঠেনি। তাই প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকা জরুরী।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য খেলাপি গ্রাহকদের কিছু ঋণ দিয়ে পুনঃতফসিল করে নেয়। বছর শেষে যাতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কম দেখানো যায় সেজন্য ব্যাংকগুলো এই কৌশল নেয়।
সভা শেষে খেলাপি ঋণ বিষয়ে সম্মেলনের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান ড. আহসান হাবীব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, যেসব গ্রাহক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হয়, তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা প্রকৃত কোন কারণে খেলাপি হয় তাদের ঋণ পুন:তফসিলের সুযোগ দেয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রেও গ্রাহক আসলে কী কারণে খেলাপি হলো তা তদন্ত করে দেখতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হয় তবে তাকে ঋণ পুন:তফসিলের সুযোগ দেয়া উচিত হবে না। বরং চাপ প্রয়োগ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনেক ব্যাংকই খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য দিতে চায় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে সেজন্য কিছু ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপির সঠিক চিত্র দেখাতে চায় না ব্যাংকগুলো। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়া দরকার। যেন প্রতিমাসে সময়মত ব্যাংকের সঠিক চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে বাধ্য থাকে।
সভায় ভারতের ব্যাংকগুলোর উপর করা “অ্যানালাইসিস ব্যাংক স্ট্যাবিলিটি ইন ইন্ডিয়া: ইভিডেন্স ফর্ম ২০০৭-১৬” শীর্ষক প্রবন্ধে ভারতীয় ব্যাংকের বাজার কাঠামো এবং মুনাফা ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৬৬টি ব্যাংকের তথ্য নিয়ে প্রস্তুত করা ওই প্রবন্ধে বলা হয়, ভারতের সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক অনেক বেশি স্থিতিশীল তা বলা যাবে না। যদিও ব্যাংকগুলোতো তারল্য মোটামুটি স্থিতিশীল।