সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ের একটি কক্ষে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পরে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর এবং সরকারি নথির ছবি তোলার ‘অপরাধে’ অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে মামলা দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকায় কর্মরত বরিশাল বিভাগের সাংবদিকদের সংগঠন ‘বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন-বিডিজেএ’।
সংগঠনের সভাপতি আমীন আল রশীদ এবং সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব সৈকত সাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বরিশালের সন্তান রোজিনা ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে সচিবালয়কেন্দ্রিক সরকারি কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের সংবাদ বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে প্রকাশ করে আসছেন। যে কারণে তিনি ওইসব অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টার্গেটে ছিলেন। সবশেষ গতকাল ১৭ মে ২০২১ পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে সেখানে স্বাস্থ্য সচিবের পাশের একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাঁর মোবাইফল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এমনকি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরছেন।
বিডিজেএ মনে করে, এই ঘটনা স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উপরে বড় ধরনের আঘাত। এ ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও গণবিরোধী সরকারি কর্মচারীরা এমন একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, যাতে সাংবাদিকরা কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশে সাহস না পান। তারা সচিবালয়সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত বা সম্ভব হলে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে চায় যাতে তারা নির্বিঘ্নে জনগণের টাকা লুটপাট করতে পারে।
বিডিজেএ বিশ্বাস করে, এরকম একজন দুজন বা আরও বেশি সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দরজা বন্ধ করা যাবে না। জনগণের করের পয়সায় বেতন হয় যে গণকর্মচারীদের, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম বরাবরের মতোই সোচ্চার থাকবে।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে, সেটির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে বিডিজেএ মনে করে। কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা তথা রাষ্ট্রীয় বড় কোনো অন্যায়ের খবর জনগণকে জানানো গণমাধ্যমের দায়িত্ব। সুতরাং একজন সাংবাদিক যদি সরকারি কোনো নথির ফটোকপি নেন বা ছবি তোলেন, সেটি কোনোভাবেই তথ্যচুরি নয়।
বিডিজেএ সাহসী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের দ্রুত মুক্তি কামনা করছে এবং তাঁর ওপরে শারীরিক নির্যাতনকারী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ২০১৩ সালের নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়েরের দাবি জানাচ্ছে।