মনসুর আহমেদ; রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়েছে। গতকাল ও আজ মঙ্গলবার রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় পাহাড়ধসের এসব ঘটনা ঘটে। সেনা ক্যাম্প ধসে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙ্গামাটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ৩৫ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে রাঙ্গামাটিতে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি শহরে ১১জন ও কাপ্তাই উপজেলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় প্রশাসন এবং জন সাধারণ। তাদের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে বিভীষিকার ভয়াবহতা।
এর মধ্যে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে এক মেজর ও এক ক্যাপ্টেনসহ ৬ সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মেজরের নাম মাহফুজ ও ক্যাপ্টেনের নাম তানভীর বলে জানা গেছে এবং নিহত চার সেনা সদস্যের মধ্যে দুজন হচ্ছেন শাহিন ও আজিজ।
পাহাড় ধসের প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে বলছেন: প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং বাতাসের কারণে ক্ষয়-ক্ষতি এবং প্রাণহানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দিয়ান চাকমা বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ চিৎকারের শব্দে ঘুম ভাঙে। বাইরে বেরিয়ে দেখি সবাই দৌড়া দৌড়ি করছে। এর মধ্যে একটি ঘর উড়িয়ে নিচে নিয়ে গেছে।পাহাড়ের ওপর থেকে অনেক নিচে গিয়ে পড়েছে ঘরটি। এরপর আবার পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে ঘরটি। ওই বাড়িতে থাকা চার জনের কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
প্রমিত বলছেন: হঠাৎ-ই বুঝতে পারলেন তারা ঘর নেই। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ ঘোর কেটে যাওয়ার পর বুঝেতে পারলেন ঝড় তার ঘর উঠিয়ে নিয়ে গেছে! পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অক্ষত থাকলেও ছোটো ভাই আহত। এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে: তারা সর্বাত্মক উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক জায়গা থেকে সর্বোচ্চ এগারোটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে তারা। এর মধ্যে যেমন রয়েছে পাহাড়ি তেমন বাঙালি। আবহাওয়া বৈরী থাকায় সময়ের সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এছাড়া, চট্টগ্রামের ধোপাছড়ি এলাকাতেও প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সেখানে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বান্দরবান সীমান্তে ধোপাছড়িতে ৪ জন ও রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুরে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ২জন। অবিরাম বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ কসাইপাড়া এলাকায় প্লাবিত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানেও পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, সুমন বড়ুয়ার সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮) মিতু বড়ুয়া (৬) লতা বড়ুয়া (৫)। অপর পাহাড় ধসের ঘটনায় কালাঘাটা এলাকায় রেভা ত্রিপুরা (১৯) নামে বান্দরবান সরকারী কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও লেমুঝিরি আগা পাড়ায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন কামরুন নাহার (২৭) সুকিয়া আক্তার (৮)।