চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রকাশ্যে খুন হলেও কেন কেউ এগিয়ে আসছে না?

সম্প্রতি বরগুনায় স্ত্রীর সামনে নৃশংসভাবে তার স্বামীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় চলছে। যে কোনো হত্যাকাণ্ডই দুঃখজনক, তবে রাস্তায় প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেখানে উপস্থিত অনেকে থাকলেও কেউ প্রতিবাদ করেনি ও নিহত রিফাত শরীফকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।

সামাজিক মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন যুবক রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর আঘাত করছে। আর তাদের হাত থেকে স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করছেন রিফাতের স্ত্রী। তিনি চিৎকার করে সাহায্য চাচ্ছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ উপস্থিত থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ হত্যার ঘটনায় প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন।

এ সময় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন: ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি আগে এরকম ছিল না। অনেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমরা সবাই মর্মাহত।’

হাইকোর্টের এ মন্তব্যের ভেবে দেখার মতো। এক্ষেত্রে আমাদের একটু খতিয়ে দেখা দরকার যে, দেশে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে এধরণের ঘটনায় যারা প্রতিবাদ করেছেন বা এগিয়ে এসেছেন, তাদের পরিণতি কী হয়েছে? সাহসিকতার জন্য কি পুরস্কৃত করা হয়েছে? প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন ঘটনার মামলার সাক্ষী করা হলেও যথেষ্ট নিরাপত্তা কি দেয়া হয়েছে? সহায়তায় এগিয়ে আসা ব্যক্তিকে হয়রানির অনেক উদাহরণ আছে, তাই এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের ওপর কি সব দায়ভার চাপানো যায়?

বরগুনার এই ঘটনায় কোনো সাধারণ জনগণ হয়তো এগিয়ে আসেনি, কিন্তু এদেশের মানুষ এসব হয়রানির কথা জেনেও অতীতে বিভিন্ন ঘটনায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। প্রতিবাদ করতে এসে প্রাণহানির ঘটনার উদাহরণও আছে অনেক। মানুষ সম্মিলিতভাবে কখনোই এমন নির্বাক কিংবা বিবেক বিবর্জিত ছিলেন না, তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সমাজ বদলেছে বললেও ভুল হবে না। দিন দিন সমাজ কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি।

এছাড়া বরগুনার এই ঘটনার এক আসামী নয়ন ২০১৭ সালে আরেকজনকে কুপিয়েছিল বলে সোশ্যাল মিডিয়াসহ গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তখন সে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়নি বলেই হয়তো এমন হত্যাকাণ্ডের সাহস পেয়েছে বলে আমরা মনে করি। এসব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দোহাই দিয়ে কেউ যেন পার না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকসময় এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তারা পার পেয়ে যায়।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে, এবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি হাইকোর্টের নজরেও এসেছে। খুনিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেই বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই খুনিরা কোনোভাবেই পার পাবে না বলে আমরাও আশা করি।

এই নৃশংস ঘটনায় খুনিদের শিগগিরই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।