জলবায়ু তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে দাবি করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি বলছে, ঝুঁকির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তহবিল বরাদ্দ হচ্ছে না। দলীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকার পরও বরাদ্দ কম দেয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পছন্দমতো প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ দেয়ায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, পৌরসভার চেয়ারম্যান-সচিব ও প্রকৌশলীরা নিজেদের আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিদের জলবায়ু প্রকল্প বাস্তবায়নের ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তা না করে সচ্ছল ব্যক্তিদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান: প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি আরো দাবি করে, জলবাযু প্রকল্পের সুবিধাভোগিদের পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের ঘটনাও ঘটেছে। বাস্তবায়িত হওয়া ৬টি প্রকল্পের ওপর করা গবেষণার তথ্য নিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। বাংলাদেশে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি মোকাববিলায় ৩৭৮টি প্রকল্প রয়েছে। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬শ কোটি টাকা। আমরা জানি বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তুলে ধরে ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এজন্য দায়ী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে দেয়নি। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর অর্থে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১২ সালে। সেখানে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে অর্থ দিয়ে ওই তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছিল তারা। তবে সেই বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু দেখা গেছে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মতোই জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পগুলো অনুমোদন এবং অর্থ খরচে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে সেসব প্রকল্প গ্রহণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীতার অভাবও দেখা যাচ্ছে। যার মানে দাঁড়ায়, ওইসব প্রকল্প নেয়াই হয় অর্থ লুটপাটের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এর ফলে ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীগুলো আরো ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, জাতীয় স্বার্থে অতি গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু তহবিল আরো বেশি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিৎ। বিশেষ করে এ তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরো উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এজন্য সেখানে গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি প্রকল্প গ্রহণে বাস্তবসম্মত নীতিমালা থাকাটাও বেশি জরুরি।