বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা অত্যন্ত বেশী। বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে প্রতি বছর বহু নারীকে স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় হত্যা করে। নির্যাতনের কারণে অনেক নারীর সংসার বিচ্ছেদ ঘটে ও শিশুরা অভিভাবকহীন অবস্থায় বড় হয়। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর অধীন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার হয়। এই বিপুল সংখ্যক মামলার পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দেশে পারিবারিক সহিংসতা অনেক বেশী। এমনকি করোনাকালে সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ গত মে মাসে প্রকাশিত জরিপের তথ্যে জানায়, ২৭টি জেলায় এপ্রিল ২০২০ মাসে ৪২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ টি শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ তাদের বাবা মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। আর নারীরা বেশির ভাগই স্বামীর হাতে নির্যাতিত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৭০৩ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয় এবং ৭৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত ৮৮৯ জন নারী কে ধর্ষণ করা হয় ও ৪১ জন কে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ৯ জন ধর্ষণের ফলে আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ১০০৮ জন শিশু এবং আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত ৩২৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অপর একটি পরিসংখ্যান মতে, ৮০% ধর্ষক ভিকটিমের পরিচিত ব্যক্তি অর্থাৎ আত্মীয় স্বজন, বাড়ির লোক এবং প্রতিবেশী হন। সর্বশেষ সিলেটের এম.সি কলেজ ও খাগড়াছড়িতে উপজাতীয় নারীকে গণধর্ষণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয় নারীর নিরাপত্তা নিয়ে।
‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর মতে, বর্তমান করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা ৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশুর প্রতি সহিংসতা ৩১% বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশে করোনা মহামারির প্রথম তিন মাসে পারিবারিক সহিংসতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে করোনাকালে নারী নির্যাতনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ও নিষ্ঠুর ঘটনা সংগঠিত হয়। করোনাকালে বিভিন্নস্থানে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতিকালে অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। ফেনীতে ফেসবুক লাইভে গৃহবধূকে তার স্বামী গত ১৫ এপ্রিল নির্মমভাবে হত্যা করে।
বাংলাদেশের নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার অন্যতম মূল কারণ, পুলিশ ও আদালতের নিকট অভিযোগ না করা। একটি জরিপে দেখা যায়, ৮০% নারী কোন না কোন সহিংসতার শিকার। এদের ৭২% উক্ত সহিংসতার বিষয় প্রকাশ করেন না। অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ‘‘ডার্ক ফিগার অব ক্রাইম’’ বলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে, সারাবিশ্বে প্রতি তিনজনের একজন নারী শারীরিক বা যৌনভাবে নির্যাতনের শিকার হন তার স্বামী বা সঙ্গী দ্বারা। এছাড়া বিশ্বে ৩৮% নারীকে নির্যাতনপূর্বক হত্যা করে তার স্বামী বা সঙ্গী। বাংলাদেশের পারিবারিক সহিংসতার জঘন্যতম ও নিষ্ঠুর উদাহরণ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুর। তাকে তার স্বামী সাইদুল ইসলাম টুটুল ২০১১ সালে তার বাবার বাসায় নির্যাতন করে তার দুচোখ আঙ্গুল দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে ফেলে এবং তিনি অন্ধ হয়ে যান।
১৯৭৯ সালে নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য দুর করার উদ্দেশ্যে সিডও সনদ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ উক্ত সনদের সদস্য রাষ্ট্র। এছাড়া ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ কার্যকর করা হয়। বাংলাদেশ উক্ত সনদেরও সদস্য রাষ্ট্র। উক্ত আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধকল্পে ও সুরক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০’ ও ‘বিধি ২০১৩’ প্রণয়ন ও কার্যকর করে। বাংলাদেশ সরকার পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করে। তন্মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, দ্য পেনাল কোড ১৮৬০, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ আইন ১৯৮৫ উল্লেখযোগ্য।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ হচ্ছে নারী ও শিশুকে পারিবারিক সহিংসতা থেকে রক্ষার মুল আইন। কিন্তু দু:খজনক বিষয় হচ্ছে, এই আইনটি বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। উক্ত আইনের ২(১২) ও ৩ ধারায় পারিবারিক সহিংসতার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। উক্ত ব্যাখ্যাটি প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক সহিংসতা বলতে, পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের উপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বুঝাবে। উক্ত চার ধরনের নির্যাতন ও ক্ষতিকে আলাদাভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
এই আইনের বাস্তবায়নকারী হলো পুলিশ অফিসার, প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবাপ্রদানকারী কর্মকর্তা এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। উক্ত আইনের ১০-১৪ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার অভিযোগ যেকোন থানায় পুলিশ অফিসার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা সরাসরি আদালতের নিকট সুরক্ষার জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। অভিযোগপ্রাপ্তির সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার বা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তার অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করে, ভিকটিম আহত হলে তাকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট সেবা প্রদানের জন্য উপস্থাপন করবেন এবং উক্ত প্রতিবেদন সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হলে আদালত সাত কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত অভিযোগ শুনানির জন্য ধার্য করবেন। ইতিমধ্যে প্রতিপক্ষকে ৩ দিনের মধ্যে সমন প্রদানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং প্রতিপক্ষকে কেন ভিকটিমের প্রতি সুরক্ষা প্রদানের আদেশ দেয়া হবেনা মর্মে কারণ দর্শানোর আদেশ ইস্যু করবেন।
এই আইনের ধারা ১৪ অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালত চাইলে অভিযোগপ্রাপ্তির সাথে সাথে ভিকটিমের সুরক্ষা আদেশ বা ভিকটিমের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। উক্ত আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালত ভিকটিমের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভিকটিমকে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ, প্রতিপক্ষকে ভিকটিমের আবাসস্থলে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা, ভিকটিমের জমি বা সম্পত্তিতে ভোগ দখলের নিশ্চয়তা ও বেদখলের বিষয়ে প্রতিপক্ষকে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আদেশ ও সুরক্ষার আদেশ দিতে পারেন। আদালত চাইলে ভিকটিমকে পৃথক আবাসস্থলে বা ভাড়া বাসায় ভিকটিমের থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। এই আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের আদেশ আদালত দিতে পারবেন। উক্ত ক্ষতিপূরণের আদেশের ক্ষেত্রে ভিকটিমের প্রতি আঘাত, ভোগান্তি, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির প্রকৃতি ও পরিমাণ, চিকিৎসা খরচ এবং ক্ষতির স্বল্প-দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব মূল্যায়ন করে ক্ষতিপূরণ আদেশ দিতে পারবেন। এছাড়া ভিকটিমের ও তার সন্তানের ভরণ পোষণ প্রদানের আদেশ আদালত দিতে পারবেন।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এর ২০ ধারা অনুযায়ী আদালত এই আইনের অধীন অভিযোগ বা যে কোন দরখাস্ত ষাট (৬০) কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। এছাড়া আদালত চাইলে কারণ উল্লেখপূর্বক আরো ২২ দিন সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করার জন্য আদালত চাইলে সরাসরি তদন্ত এর আদেশ দিতে পারবেন। এছাড়া অভিযোগ সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করতে হবে। আদালত চাইলে উভয়পক্ষকে নিয়ে রুদ্ধদার কক্ষে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। উক্ত আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী এই আইনের অধীন সংগঠিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য।
এই আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুরক্ষা আদেশ। আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী প্রতিপক্ষ যদি আদালতের কোন সুরক্ষা আদেশ বা আদেশে উল্লেখিত কোন শর্ত লংঘণ করে, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে। উক্ত অপরাধের জন্য প্রতিপক্ষকে ৬ মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। যদি কোন প্রতিপক্ষ উক্ত অপরাধ পুনরাবৃত্তি করেন, সেক্ষেত্রে উক্ত প্রতিপক্ষকে ২ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দন্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এই আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত কোন আদেশ যদি প্রয়োগকারী কর্মকর্তা পালন করতে অস্বীকার করেন, অবহেলা করেন বা ব্যর্থ হন এবং তিনি তার উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম না হন, তাহলে আদালত উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।
আইনটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক সহিংসতা রোধে এবং নারী ও শিশু কে সুরক্ষা প্রদানের একটি প্রগতিশীল ও ইতিবাচক আইন। কিন্তু সারাদেশের তথ্য পর্যালোচনায় ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, এই আইনের প্রয়োগ খুবই কম ক্ষেত্রে হচ্ছে। বেশিরভাগ জেলায় বছরে ১-১০টির বেশি মামলা রুজু হয় না। এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা ২০১৬ সালে বগুড়া, যশোর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরগুনা ও দিনাজপুর জেলার জানুয়ারি ২০১১- মে ২০১৫ পর্যন্ত সময়কালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, এনজিও এর প্রজেক্টের সহায়তায় আটটি উপজেলায় এই আইনের অধীন ১৭১ টি মামলা রুজু হয় এবং প্রজেক্ট বহির্ভূত ৫৭ টি উপজেলায় ৪৮টি মামলা রুজু হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় গত ৩ বছরে ফেনী জেলায় আমি একটি মামলার দায়িত্ব পাই ও ভিকটিমের প্রতি সুরক্ষা আদেশ দিয়ে দ্রুত ইতিবাচক নিষ্পত্তি করি।
যেহেতু এই আইনের অভিযোগ জামিনযোগ্য এবং প্রতিপক্ষকে শুরুতে জেলে পাঠানোর বা হয়রানির সুযোগ কম থাকে, তাই এই আইনে অপরাধ হলেও, বাস্তবে যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ ও পরবর্তীতে প্রণীত আইন ২০১৮ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীন মামলা দায়ের করা হয়। এই আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ও যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ এর অধীন রুজুকৃত মিথ্যা মামলার হার অনেকাংশে কমে যাবে।
এই আইনটিকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগকারী কর্মকর্তা হিসেবে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কারণ গরিব, অসহায় ও নির্যাতিত মহিলারা সাধারণত আইন ও আদালতের আশ্রয় লাভের উদ্দেশ্যে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে এসে থাকেন। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার, যিনি একজন বিজ্ঞ বিচারক, তিনি অভিযোগের প্রকৃতি বুঝে ভিকটিমের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে উক্ত অভিযোগ আদালতে দায়ের করার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া অভিযোগ যেহেতু আপোষযোগ্য, তিনি উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে অভিযোগ আপোষ মীমাংসা করে দিতে পারেন। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার আদালত কর্তৃক নির্দেশিত ক্ষতিপূরণ আদায় করে ভিকটিম পক্ষকে দিতে পারবেন।
আইনটিকে বাস্তবিক অর্থে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন। আইনের প্রয়োগ নিয়েও মনিটরিং করা প্রয়োজন। এছাড়া এই আইনকে অধিকতর কার্যকর ও প্রয়োগ করার লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। স্থানীয় এনজিও সমূহকে এই আইনে সহায়তা করার লক্ষ্যে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিটি থানা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস কে এই আইনের অধীন সহায়তা প্রদান ও ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কার্যকর কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হলে এই আইনের কার্যকারিতা ও সুষ্ঠু প্রয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)