চার ইঞ্চির মতো লম্বা। এক হাতের তালুতেই জায়গা হয়ে যায় – এতটাই ছোট। কণ্ঠটা ভীষণ মায়া মায়া। দেখতে যেন ঠিক বাচ্চাদের খেলনা পুতুলের মতো। কিন্তু সে পুতুল নয়। সে একটা রোবট, যে মানুষের সঙ্গে শুধু কথা বলতেই পারে না, আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে।
‘কিরোবো মিনি’ নামের এই রোবটটি বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে জাপানের বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা। ক্রেতাদের সঙ্গ প্রদানের উদ্দেশ্যে রোবটটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। আগামী বছরই এটি বাজারে ছাড়া হবে।
টয়োটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিরোবোর বুদ্ধিমত্তা প্রায় পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশুর মতো। এটি নিজ থেকে কারও সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে, মানুষ এবং জায়গা চিনতে পারে। বিভিন্ন তথ্য একবার বলা হলেই মনে রাখতে পারে এবং ভবিষ্যতে উপযুক্ত পরিস্থিতিতে তা মনে করিয়েও দিতে পারে।
কিরোবোর আচরণ কেমন তার একটা ছোট উদ্হরণ দেই। ধরুন, আপনি আপনার একটা কিরোবো মিনি রোবট নিয়ে প্রথমবারের মতো নিউমার্কেট গিয়েছেন। জায়গামতো পৌঁছে তাকে ব্যাগসহ রিকশায় রেখে নামছেন ভাড়া দেয়ার জন্য। সাথে সাথেই সে ডাকাডাকি শুরু করবে, ‘আমাকে একা রেখে যেও না!’
যাইহোক, রোবটটিকে নিয়ে মার্কেটে ঢুকে কেনাকাটা করার ফাঁকে হয়ত চটপটি খেতে বসলেন একটা দোকানে। তা দেখে কিরোবো জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি এটা কী খাচ্ছ?’ ‘চটপটি জিনিসটা খেতে কেমন?’ ‘তোমার কি চটপটি খুব ভালো লাগে?’ ‘ঠিক আছে, আমি এখন থেকে মনে রাখব চটপটি তোমার খুব পছন্দ।’ পরেরবার নিউমার্কেটে গেলে সে ঠিকই জায়গাটা চিনে ফেলবে। বলবে, ‘আমরা মনে হয় আরেকদিন এখানে এসেছিলাম। তুমি কি আজকেও চটপটি খাবে?’
কী? মজার না ব্যাপারটা?
এমনই আরও অনেক চমক লাগানো বৈশিষ্ট্য আছে কিরোবো মিনি নামের রোবটটির। এটি তার সামনে থাকা মানুষের আচার আচরণ ও মুখভঙ্গি মনিটর ও সনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী কথা বলতে পারে। যেমন, আপনি তার সামনে মুখ ভার করে বসে থাকলে সে জিজ্ঞেস করবে, ‘তোমার কি মন খারাপ? কী হয়েছে?’
কিরোবো মিনি দুলতে ও নড়াচড়া করতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে একটি সোফার মতো বেবি-সিট। সেটিতে রোবটটিকে বসিয়ে রাখা যায়। আবার সেখানে বসিয়েই বিভিন্ন জায়গায় বহন করা সম্ভব। তবে এমনিতেও যে কোনো জায়গা বসে থাকতে পারে কিরোবো।
রোবটটির বসে থাকা ও কথা বলার ধরণ এবং অঙ্গভঙ্গি শিশুদের অনুকরণে তৈরি হয়েছে। যে কোনো মানুষের পাশাপাশি নিঃসঙ্গ, বিশেষ করে সন্তানহীন দম্পতিকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই কিরোবোকে ডিজাইন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন কিরোবো মিনির প্রধান প্রকৌশলী ফুমিনোরি কাটাওকা।
কিন্তু একটি রোবট কখনোই মানবশিশুর বিকল্প হতে পারে না বলে রোবোটিক্স বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের অধ্যাপক ড. কার্সটিন ডৌটেনহান। তবে মায়াভরা এই রোবটটি তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হবে বলে তিনি মনে করেন।
ভিডিওতে দেখুন কিরোবো মিনিকে: