Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

‘পথের পাঁচালী’র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা কতটুকু চিনি?

তাঁর সৃষ্টি অমরত্ব পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজে থেকে গেছেন অনালোচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাংলা সাহিত্যের এক শিক্ষার্থীকে একবার অনেক আলাপের ভিড়ে প্রশ্ন করেছিলাম, বাংলা ভাষায় লেখা সেরা উপন্যাস কোনটিকে ধরা হয়? একটু ভেবে উত্তর দিয়েছে, কেন, পথের পাঁচালি! পরের প্রশ্ন: এটা যেন কার লিখা? উত্তর: বিভুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের প্রশ্ন: উনার পেশা যেন কি ছিল? এবার সে আমতা আমতা করে বলেছে, কেন উনি তো সাহিত্যিক ছিলেন!

সাহিত্যিক তো ছিলেন, কিন্তু তাঁর পেশা ছিল কি? পেট চালানোর খরচটা কোত্থেকে আসত? এর জন্য তাঁকে কী করতে হতো? হ্যাঁ, বাস্তবতা হলো, সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের অনেকেই তা জানে না। বেশিরভাগ মানুষই তা জানে না। জানবে কীভাবে? এদেশে রবীন্দ্রনাথের বাইরে আমরা আর কোনো কবি-সাহিত্যিককে নিয়ে মাতামাতি করি বলুন? নজরুলকে যেহেতু আমরা ‘জাতীয় কবি’র তকমা দিয়েছি, কাজেই তাঁকে নিয়েও একটু আলাপ-আলোচনা হয়।

নজরুল ছোটকালে রুটির দোকানে কাজ করেছেন। সৈনিক ছিলেন। ব্যস এ পর্যন্তই। এর বাইরে তেমন কাউকে নিয়েই আমাদের দেশে আলাপ-আলোচনা হয় না। লেখাও হয় না। লেখা হলেও পড়ার লোকের অভাব তো রয়েছেই!

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

হ্যাঁ, বাংলা তথা ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’। বিশ্বের বহু ভাষায় এর অনুবাদ হয়েছে। পথের পাঁচালী চিত্রায়িত করেই চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় সিনেমা জগতে প্রবেশ করেছেন এবং বিশ্ব-বরেণ্য হয়েছেন। স্কুলের পরীক্ষায় ‘তোমার প্রিয় গ্রন্থ’ রচনা এলে বহু ছাত্রছাত্রীই পথের পাঁচালীকে বেছে নেয়। শুধু পথের পাঁচালীই নয়, মানুষের সুখ-দুঃখ ভরা আরও বহু গল্প-উপন্যাস বিভূতিভূষণ লিখেছেন। এর অনেকগুলোই আজকের সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার যুগে সম্প্রীতির দিশারি।

নিভৃতচারী এই কথাসাহিত্যিকের সাহিত্যকর্মে প্রকাশিত হয়েছে পল্লীর জীবন ও নিসর্গ রূপায়ণে বাংলার আবহমানকালের চালচিত্র ও মানবজীবনের অন্তর্লীন সত্তা। তাঁর রচনায় প্রকৃতি কেবল প্রকৃতিরূপেই আবির্ভূত হয়নি, বরং প্রকৃতি ও মানবজীবন একীভূত হয়ে ধারণ করেছে অভিনব রসমূর্তি। মানুষ যে প্রকৃতিরই সন্তান- এই সত্য প্রতিফলিত হয়েছে তার বিভিন্ন রচনায়। প্রকৃতির লতাপাতা, ঘাস, পোকামাকড় সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে স্থান পেয়েছে তাঁর রচনায়।

বিভূতিভূষণ প্রকৃতির অনুপুংখ বর্ণনার মধ্যদিয়ে তুলে ধরেছেন গভীর জীবনদৃষ্টিকেও। তবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনচিত্র ও সমকালের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাও সমভাবে উৎসারিত হয়েছে তাঁর রচনায়। তাই বাংলা কথাসাহিত্যে শরৎচন্দ্রের পরে বিভূতিভূষণই সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সাহিত্যিকের মর্যাদা পেয়েছেন।

১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। এই সুসাহিত্যিকের জীবনকাহিনি পড়লে মনটা বিষাদে ভরে যায়। অনেকেই জানেন না যে, এখন থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯১৭ সালে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনকার উত্তর ২৪ পরগনা ও তৎকালীন যশোর জেলার বনগাঁ-র নিকটবর্তী ‘চালকি-বারাকপুর’ গ্রামটি বিভূতিভূষণের পৈতৃক গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও এই পরিবারটির আদি নিবাস উত্তর ২৪ পরগনা জেলারই বসিরহাট লাগোয়া ‘পানিতর’ গ্রামে।

সেখানে তাঁদের পারিবারিক পেশা ছিল কবিরাজি। চিকিৎসার কাজেই বিভূতিভূষণের প্রপিতামহ চালকি-বারাকপুর-এ এসেছিলেন। পরে তাঁর পুত্র অর্থাৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ বারাকপুরকেই তাঁর স্থায়ী কর্মস্থল নির্বাচন করে সেখানে থেকে যান। তাঁর পুত্র মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র বিভূতিভূষণ।
পৈতৃক পেশা কবিরাজি ছেড়ে মহানন্দ পৌরোহিত্য ও কথকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। কিন্তু দারিদ্র্য তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।

পিতার দারিদ্র্যের কারণে বালক বিভূতিভূষণের যখন পড়াশোনা বন্ধ হবার উপক্রম, সে সময় ঘটনাচক্রে তিনি তাঁদের পৈতৃক গ্রাম পানিতরের ধনী আইনজীবী কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের স্নেহ-দৃষ্টিতে পড়ে যান। কালীভূষণের স্নেহ, উদারতা ও অর্থ সাহায্যে বিভূতিভূষণের শিক্ষার্জন চলতে থাকে। এইসময় বালক বিভূতিভূষণ বেশ কিছুকাল কালীভূষণের বাড়িতে অবস্থান করেন।

এরপর ‘প্রকৃতির নিয়মে’ই কালীভূষণের মেজমেয়ে গৌরী প্রথমে বালক বিভূতির খেলার সাথী, পরে বাল্য-প্রণয়ীতে পরিণত হয়। এই গৌরীকেই ইংরেজি ১৯১৭ সালে বিভূতিভূষণ জীবন-সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেন।

কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর খেলা, ভালোবাসা ভরা এই মধুর দাম্পত্য জীবন তাঁদের দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বিয়ের এক বছরের কিছু সময় পর মহামারী ওলাওঠা (কলেরা) রোগে গৌরীদেবী ও তাঁর মা অর্থাৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাশুড়িমা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরলোকে পাড়ি জমান।

প্রিয়তমার এই অকাল প্রয়াণ বিভূতিভূষণের সাহিত্যিক মনকে এত বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল যে, তার প্রভাব জীবনের নানা ক্ষেত্রেই পড়েছিল। সবচেয়ে বেশি পড়েছিল তাঁর কর্মক্ষেত্রে। বিভূতিভূষণ তখন হুগলি জেলার জাঙ্গীপাড়া দ্বারিকানাথ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। শোকাচ্ছন্ন বিভূতিভূষণ কিছুতেই স্ত্রীকে ভুলতে পারছিলেন না। মাঝে মাঝেই তিনি স্ত্রীর উদ্দেশে প্ল্যানচেট করতেন। সে সময় স্কুলের অস্থায়ী প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন সিংহরায় শিক্ষকতা ছেড়ে ওকালতি পেশায় যাবেন বলে মনস্থ করলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল বন্ধু ও অত্যন্ত ছাত্রদরদি শিক্ষক বিভূতিভূষণকে ওই পদে বসাবেন।

সেই সময় ওই গ্রামের রাজকুমার ভড় নামে এক ব্যক্তি এমএ পাশ করলে, তাঁর একদল অনুগামী ভিনদেশের মানুষ ও বিএ পাশ বিভূতিভূষণের বদলে এমএ পাশ এবং গ্রামের মানুষ রাজকুমারকে ওই পদে বসাতে চাইলেন।

বিভূতিভূষণকে কোণঠাসা করার জন্য তাঁরা নানা ফন্দি আঁটতে লাগলেন। তুরুপের তাস করা হলো বিভূতিভূষণের প্ল্যানচেটের ব্যাপারটাকে। প্রিয়তমা বঁধুর প্রতি গভীর অনুরাগ ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেন যে প্লানচেটে, সেটাকেই তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলো। বহু গ্রামবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তোলা হলো যে, একজন শিক্ষক ভূত-প্রেত নিয়ে খেলা করেন। প্রসঙ্গটা পৌঁছে দেওয়া হল শ্রীরামপুরের সাব-ডিভিশনাল অফিসারের কানে। এসডিও সাহেব একজন সরকারি পরিদর্শককে তদন্তে পাঠালেন। প্ল্যানচেট, কুসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে কিছু প্রশ্ন করার পর পরিদর্শক মহাশয় বিভূতিভূষণকে প্ল্যানচেট করে দেখাতে বললেন।

স্কুলের একটি ফাঁকা ঘরে ধূপ, ধুনো, মোমবাতি জ্বালিয়ে বিভূতিবাবু প্ল্যানচেট শুরু করলেন। নড়তে শুরু করল প্ল্যানচেট মিডিয়ামে ধরা পেনসিল, যেখানে কোনও হাত নেই। ছায়াছায়া এক অশরীরী আত্মার আবির্ভাব অনুভব করলেন ওই পরিদর্শক।
গ্রামবাসীদের মধ্যে আরও ব্যাপক প্রচার হল যে, স্কুল বাড়িতে ভূত-প্রেত নামিয়েছেন স্কুলেরই শিক্ষক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

খুব শিগগিরই স্কুল কমিটির সভা বসল। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে রাজকুমার ভড় হলেন প্রধান শিক্ষক। নতুন প্রধান শিক্ষকের তৈরি এক রিপোর্টের ভিত্তিতে স্কুল-কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিল তা একটি বন্ধ খামে বিভূতিভূষণকে ধরিয়ে দেওয়া হল। খাম খুলে বিভূতিবাবু দেখলেন, তাতে লেখা, ‘‘বিভূতিভূষণ ব্যানার্জি ইজ্ আন-স্যাটিসফ্যাকটোরি অ্যাজ এ টিচার, সো হি সুড বি রিমুভ্ড ফ্রম দি টিচিং স্টাফ।’’
ছাত্ররা এই দরদি শিক্ষককে ছাড়তে না চাইলেও অপমানিত বিভূতিবাবুর আর কোনো উপায় রইল না। প্রধান শিক্ষকের আপত্তিতে স্কুলে তাঁর ফেয়ারওয়েলের অনুমতি না মেলায় ছাত্ররা ওই গ্রামেরই মহেন্দ্র সাঁপুইয়ের আটচালায় চোখের জলে তাদের প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানায়। ‘পথের পাঁচালী’র লেখক তাঁর প্রিয় কর্মক্ষেত্রে ফেরাওয়েলও পাননি! ভাবা যায় ‘আত্মঘাতী বাঙালি’র মূঢ়তা?

বিষণ্ণ মনে কলকাতায় ফিরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সুপারিশে আবার তিনি চাকরি পেলেন। এবারও শিক্ষকতা, স্থান দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর নিকটবর্তী হরিনাভি অ্যাংলো সংস্কৃত স্কুল। স্ত্রী-হারা, উদাস প্রকৃতির এই মানুষটিকে তাঁর চেয়ে ১১-১২ বছরের বড়, এই গ্রামেরই গৃহবধূ নিভাননী নিজের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করতেন। হরিনাভি অবস্থানকালে বিভূতিভূষণের মাতৃ-বিয়োগের পর এই স্নেহ আরও বেড়ে গেল। কিন্তু গ্রামের মানুষের সংকীর্ণতা ও ভিলেজ পলিটিক্স বিভূতিভূষণের পথ ছাড়ল না।
এই সময় বিভূতিভূষণ ‘পূজনীয়া’ নামে একটি গল্প তৎকালীন প্রথম সারির পত্রিকা ‘প্রবাসী’-তে পাঠালে তা ‘উপেক্ষিতা’ নামে প্রকাশিত হল। এই গল্পে ছিল ‘নিভাননী’-র ছায়া।

গ্রামে গুঞ্জন শুরু হল, মাস্টার গ্রামের বউকে নিয়ে কাগজে কেচ্ছা ছাপাচ্ছেন। এরপর ‘উমারাণী’ শিরোনামে আরেকটি গল্প প্রবাসীতে ছাপা হলে গ্রামে রটে গেল ওই গল্পটা নাকি নিভাননীর মেয়ে ‘অন্নপূর্ণা’, যার ডাকনাম ‘ফুলি’, তাকে নিয়ে লেখা। রটনা আরও বড় আকার নিল। লোকে বলতে লাগল যে, শুধু বউ নয়, গাঁয়ের কমবয়সি মেয়েদের নিয়েও মাস্টার কেচ্ছা চালাচ্ছেন। সাদা মনের মানুষ বিভূতিভূষণ ঠিক করলেন, এই স্কুল এবং এই গ্রামে আর থাকবেন না। একটি ইস্তফাপত্র লিখে স্কুল ছুটির পর তা তুলে দিলেন হেডস্যার কিশোরীলাল ভাদুড়ির হাতে। হেডস্যারের কোনও অনুরোধই বিভূতিভূষণ রাখলেন না। চোখের জলে কিশোরীবাবুর চশমা ঝাপসা হয়ে গেল। মনে মনে ইংরেজ কবি ‘মূর’-এর সেই কবিতা পড়তে লাগলেন। ‘‘গো, হোয়্যার গ্লোরি অ্যাওয়েটস দি’’। অর্থাৎ সেখানে যাও, যেখানে গৌরব তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

এবার শুরু হয় চাকরির দ্বিতীয় পর্ব। চাকরির প্রথম পর্বটা ছিল শিক্ষকতার। দ্বিতীয় পর্বটা অবশ্য ভিন্ন ধরনের। মাড়োয়ারি কোটিপতি ব্যবসায়ী কেশোরাম পোদ্দারের গো-রক্ষণী সভার প্রচারকের চাকরি! আগে বক্তৃতা দিতেন শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের সামনে, এবার বক্তৃতা দিতে হবে দেশ ঘুরে ঘুরে সাধারণ শ্রোতা-মানুষদের সামনে গো-জবাইয়ের বিরুদ্ধে!
গো-রক্ষণী সভা’র চাকরি শেষে তাঁর আবার কলকাতা ফেরা। ১৯২৩ সালে ‘মৌরীফুল’ গল্পের জন্য প্রথমবার পুরস্কারপ্রাপ্তি এবং পাথুরে ঘটার জমিদার খেলাতচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর খেলাত ঘোষ এস্টেটের ভাগলপুর জঙ্গলমহালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হয়ে ভাগলপুরে অবস্থানকালে তাঁর লেখক-জীবনের রূপান্তর ঘটে। এস্টেটের কাজের মধ্যে ছিল, জঙ্গল আবাদ, জমির বিলি বন্দোবস্ত, তহসিলের তহবিল ঠিক রাখা, মাইলের পর মাইল ঘোড়ার পিঠে ঘুরে ঘুরে মহলের তদারকি। একজন লেখকের জন্য এটাও একটা আজব চাকরি বটে!
যাহোক, এই চাকরি শেষ পর্যন্ত তাঁর লেখক সত্তাকে বিকশিত করে তোলার ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়। এই জমিদারির ক্ষেত্র ছিল বিহারের ভাগলপুর অঞ্চলে। শহর ছাড়িয়ে অনেক দূরে পাহাড়, জঙ্গল আর বিস্তীর্ণ প্রান্তর ঘেরা পরিবেশে হল তাঁর ঠিকানা। এখানকার মায়াবী নৈসর্গিক আকর্ষণ বিভূতিভূষণের কবিমনকে আরও কল্পনাপ্রবণ করে দিল, তাঁর সাহিত্যিক মনকে করে তুলল আরও উর্বর। মনে পড়তে লাগল তাঁর ফেলে আসা দিনগুলোর সুখ, দুঃখের নানা স্মৃতি। এর ভিত্তিতেই তিনি লিখতে লাগলেন ‘পথের পাঁচালী’। প্রবাসীর মতো আরেক বিখ্যাত পত্রিকা ‘বিচিত্রা’-য় ধারাবাহিকভাবে এই কাহিনি ছাপা হতে থাকল।

প্রৌঢ় বয়সে বিভূতিভূষণ রমাদেবীকে বিয়ে করলেও প্রথমা স্ত্রী ‘গৌরী’-কে তিনি ভোলেননি। ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলায় সুবর্ণরেখা নদীর ধারে একটি ছোট্ট কুটির কিনে তার নাম রেখেছিলেন ‘গৌরীকুঞ্জ’। প্রিয়তমা স্ত্রীকে প্ল্যানচেট করার দায়ে স্কুল এবং গ্রাম থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর ভাগ্যের চাকায় ঘুরতে ঘুরতে হরিনাভি, ভাগলপুর হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘাটশিলার গৌরীকুঞ্জেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেটা ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর।
বিভূতিভূষণ তাঁর সাহিত্যকর্মে কতো বিচিত্র চরিত্র নির্মাণ করেছেন। সে গুলোর অনেকের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ও আছে! অপু-দুর্গা তো আমাদের অনেকের কাছেই চিরচেনা চরিত্র। কিন্তু স্বয়ং বিভূতিভূষণের বিচিত্র জীবন সম্পর্কে আমরা কতো কম জানি!
সহায়িকা:
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (জীবনী), রুশতী সেন, পশ্চিমবঙ্গ একাডেমি
পথের কবি, কিশলয় ঠাকুর, আনন্দ পাবলিশার্স
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বড়ুয়া, গদ্যপদ্য।

Exit mobile version