ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলোচিত এই হত্যা মামলার ধার্য তারিখে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন। মামলার পরবর্তী তারিখ ১০ জুন ধার্য করা হয়েছে।
এসময় ওই মামলায় গ্রেপ্তার ২১ আসামিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. গোলাম জিলাণী জানান: আজ নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নুসরাতের মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মামলার নথি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।
এর আগে বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই’র ৮২২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এজহারনামীয় ৮জন, এজহার বহির্ভূত তদন্তে প্রাপ্ত আসামি ৮জন। ওই প্রতিবেদনে সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
এ মামলাটি গত ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্য সমাপ্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এই মামলায় সর্বমোট ৯২ জন সাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন।
এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় ৭ জন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।
এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। এবং নুসরাত হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপ ও আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
নুসরাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম. শাহজাহান সাজু বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজকে ১৬ জনকে রেখে ৫ জনকে নট সেন্ট আপ করেছে।
নট সেন্ট আপকৃত আসামি যাদেরকে পিবিআই বাদ দিয়েছে নুর হোসেন হোনা মিয়া, আলা উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল এবং আরিফুল ইসলাম এই ৫ জনকে নিয়ে যদি এজহারকারীর আপত্তি থাকে এবং এদের মধ্যে অপরাধী আছেন তবে আমরা বাদীর সাথে কথা বলে নারাজি দেব। না হয় পিবিআইয়ের দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করতে আদালতকে বলবো।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।