Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

সুষ্ঠু নির্বাচনে কতোটা ভূমিকা রাখতে পারে পুলিশ?

সমাজে জনগণের সেবায় নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুলিশ হল সর্বব্যাপী প্রতিষ্ঠান যেখানে সব শ্রেণি এবং পেশার লোকের সহজ গমন লক্ষ্য করা যায়। একশ্রেণির মানুষ আছে যারা সর্বদাই পুলিশের কার্যক্রমের নেতিবাচক দিক কিংবা সামান্য একটু ভুল ধরা পড়লেই পুলিশ নিয়ে অকল্পনীয় গদ্যনাট্য বানাতেও দ্বিধা করে না। প্রসঙ্গেক্রমে, সেই শ্রেণির মানুষজনই নিজেদের কোন বিপদে সবার পূর্বে পুলিশের দ্বারস্থ হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা চলে; এক স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক সুযোগ পেলেই পত্রিকায় বড় কলামে পুলিশকে নাস্তানুবাদ করতে ছাড়েন না। অথচ কোন সমস্যা কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত কোন রিপোর্টের জের ধরে জনগণ যখন হামলার উদ্দেশ্যে পত্রিকা অফিসের দিকে ছুটতে থাকে ঠিক তখনি পুলিশের সাহায্য নিতে কোন কুন্ঠাবোধ করেন না। কিন্তু লেখার সময় সত্য মিথ্যার করিডোরে আবদ্ধ করে রিপোর্ট করা হয় যেখানে পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়।পাশাপাশি পুলিশের ইতিবাচক ভূমিকাগুলোকে ভিতরের পাতায় কম গুরুত্ব দিয়ে অল্প করে লেখা হয়। এ চিত্রই প্রতীয়মান হয়ে আসছে পত্রিকার পাতায় অথচ যেখানে পুলিশকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

আলোচ্য নিবন্ধে নির্বাচনকালিন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক কর্মকাণ্ডগুলো তুলে আনার চেষ্টা করে হয়েছে এবং নির্বাচনের সময় পুলিশকেই কেন রাখা যাবে তার স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পরিক্রমায় পুলিশের সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা রাখার স্বপক্ষে অনেকেই যুক্তি তুলে ধরেন। আবার সেই যুক্তি তুলে ধরা মানুষগুলোই সেনাশাসিত সরকারের ঘোরতর বিরোধিতা করেন, স্বৈরশাসকের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু কি আলেখ্য ষড়যন্ত্রের তোপস্বরূপ একটি বিশেষ মহল নির্বাচনকে সামনে রেখেই সেনাবাহিনীর যোগসাজশের কথা তুলে ধরেন।এ নিবন্ধে তথ্যভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে গঠনমূলক সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।

পুলিশ বলতে একটি প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রতি মূহুর্তের প্রয়োজন, বিপদ, সংকট এবং সামাজিক যে কোন দুরবস্থায় যখন একজন জানবেনা কি করতে হবে, কি করা উচিত, প্রতিকার কি ইত্যাদি বিষয়ে সব থেকে ভরসার জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে এখনো পুলিশ কাজ করে আসছে কিংবা আমার মতো সাধারণেরা এখনো পুলিশকে দূর্যোগ সময়ের বন্ধু হিসেবে ভেবে থাকি। পুলিশেরা এখনো জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিং বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরাধ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই, পুলিশকে সমাজ এবং জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নানামুখী কাজ করতে হয়।

তার মধ্যে অন্যতম হল: সকলের জন্য নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করা, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, অন্যের সম্পত্তি রক্ষা করা এবং সমাজের মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করা, অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ করা এবং সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধিকরণে কাজ করা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের তরে ঝাঁপিয়ে পড়া সরকারি লোকটির নামই পুলিশ। রাজনৈতিক সংকট কিংবা অন্যান্য গুরুতর পরিস্থিতিতে অনেক পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে দেখা যায় যার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সহিংসতা দমন এবং নিধনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অনেক সময় দুষ্কৃতিকারীদের টার্গেটে পরিণত হয় পুলিশ বাহিনীর কর্তব্যরত সদস্যরা।

পুলিশ অফিসাররা তথা পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে, কোন দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে না। তাদের যথাযথ ভূমিকা নির্বাচনের সময় ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও সকল দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করে থাকে। পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে থাকে। নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই পুলিশ সদস্যরা নিশ্চিত করে (যেখানে তারা সৎ ও সাধুতার পরিচয় দিয়ে থাকেন)। সামগ্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটার, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ও ফলাফল গণনা পর্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত দায়িত্ব পালন করে থাকে পুলিশ বাহিনী। নির্বাচনের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন খুবই কঠিন এবং অনেক সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে কিছু এলাকা বিশেষ করে দুর্গম এলাকা ও দুষ্কৃতিকারীদের এলাকা যেখানে দায়িত্ব পালনে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। সে সব ক্ষেত্রে পুলিশকে কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা প্রদানে।

নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একটি বিরাট মহাযজ্ঞ যেখানে জনগণের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত হয়ে থাকে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হয়। ইলেকশনের পূর্ব প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিল অধ্যায় ধারণ করে থাকে কারণ এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে দাখিল করে থাকে এবং তাদের প্রার্থীতার স্বপক্ষে সভা, সমাবেশ, মিছিল বের করে থাকে। তাই সময়টা পুলিশ বিভাগের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ স্ব স্ব দলগুলো তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালায় এবং অনেক সময় মুখোমুখী অবস্থায় চলে আসে। সুতরাং গোলযোগের প্রেক্ষাপটে থাকার মোক্ষম মূহুর্তে প্রার্থী, সাপোর্টার এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও সম্পদ রক্ষায় পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে হয় এবং পুলিশও তাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজটি করে থাকে।

নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতির ঝুঁকি পুলিশকে বেশি পোহাতে হয় কারণ কতিপয় যুবক, কিশোর এবং বস্তির ছেলেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যোগসাজশে পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলতে তৎপর থাকে। বিশেষ করে মহিলা প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের শারীরিকভাবে লাঞ্জিত করে থাকে, অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে অনেকেই। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিকার কল্পে পুলিশের বিশেষ বিশেষ টিম পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশকে কৌশলী ভূমিকা নিয়ে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক রাখতে হয়। প্রফেশনাল এবং অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা যে কোন মূল্যে নির্বাচনের পরিবেশকে স্বাভাবিক এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ দানের চেষ্টা করে থাকে, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কিছু পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া যায়।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক ভোটারের ভোট সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক ভোটার যেন যে কোন ধরনের আশংকা ব্যতিরেকে ভোট প্রদান করতে পারে তার দায় পুলিশকেই বহন করতে হয়। মূলত ভোটের দিন পুলিশকে বিচক্ষণ ও সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের নিরাপত্তা পুলিশকেই নিশ্চিত করতে হয়, পোলিং এজেন্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিরাপত্তা পুলিশকে প্রদান করতে হয়। ভোটকেন্দ্রে ভোটার ব্যতীত অন্য কেহ প্রবেশ করতে পারবে না, কোন ধরনের চাপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিতকরণ, ভোট দেওয়ার পর নির্দ্বিদ্বায় ভোট কেন্দ্র হতে বাহির হওয়া, নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় উপাদানের সুরক্ষা প্রদান এবং ভোট গ্রহণ শেষে মালামালের হিসাব প্রদান করার দায়িত্ব পুলিশ নিয়ে থাকে। পাশাপাশি ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনায় নজরদারি এবং সে মোতাবেক ফলাফল ঘোষণায় পুলিশ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নির্বাচনকালিন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক প্রতিবেদনটি তৈরিতে আমি কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারের সাহায্য নিয়েছি (সঙ্গত কারণেই সকলেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), সাদৃশ্য বজায় রাখার নিমিত্তে ওয়েবেসাইটের সাহায্যও নিয়েছি। নির্বাচনে পুলিশের পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই কিংবা এ বিষয়ক কোন ভূমিকা নেই, কারণ পুলিশ শুধু আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। পরিস্থিতি কোন কারণে অশান্ত আকার ধারণ করলে আইনিবলে লাঠিচার্জ করে থাকে দুষ্কৃতিকারীদের। তবে থানার ওসি অনেকদিন এক জায়গায় দায়িত্বে থাকলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন দলের নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠাটাই স্বাভাবিক, সে হিসেবে পক্ষপাতিত্বের কিংবা স্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশ কি ভোট কেন্দ্রে কোন হস্ত:ক্ষেপ করতে পারে। পুলিশ কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কেননা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ও নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত থাকেন। সেখানে ভোটাররা প্রবেশ করে পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসেন। এখানে পুলিশের কোন ভূমিকা থাকে না, থাকতেও পারে না। তবে ভোটকেন্দ্র শান্তশিষ্ট রাখতে পুলিশের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ দেখলে বোঝা যায়; ভোটকেন্দ্রের শুরুতেই যদি পুলিশ অহেতুক কাউকে হয়রানি করে থাকে তাহলে যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার প্রেক্ষিতে সাধারণ ভোটাররা সহজে ভোট দিতে আসবে না। এক্ষেত্রে যদি পুলিশ কোন প্রার্থীর সাথে এ মর্মে যোগসাজশ করে থাকে তাহলে তার সমর্থিত ভোটাররা দলেদলে সদলবলে ভোট দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অন্য সাধারণ ভোটাররা ভয়ের কারণে ভোটকেন্দ্রে আসবে না, তাই যোগসাজশকারী প্রার্থী অল্প ভোটেই ঐ কেন্দ্রে জয়লাভ করতে পারবে।

এ ক্ষেত্রে সমাধান হল, নির্বাচনের বেশকিছুদিন আগে গণহারে ট্রান্সফার পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে সহায়ক, তাছাড়া পুলিশ নিজেরাই ইচ্ছে করলে এ ধরনের গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে, নিজের বিভাগকে তথা বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারবে। যেখানে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকাকে কেন্দ্র করে পক্ষে বিপক্ষে মতামত আসে। ভিন্নপ্রেক্ষিতে একজন পুলিশ অফিসার মন্তব্য করেন; সেনাবাহিনী থাকলে মাঠে জুজুর ভয় কাজ করে, স্থানীয় গোন্ডাপান্ডারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির সাহস পায় না। ওই দিন সেনাবাহিনী পুলিশ বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করলে পুলিশের কাজটাও অনেক সময় সহজ হয়ে পড়ে। অন্য একজন অফিসার মতামত দেন; বাংলাদেশের কিছু দুর্গম এলাকা আছে সেখানে পুলিশের সাথে সেনাবাহিনীকে রাখা যেতে পারে, তবে সারা বাংলাদেশে একই সাথে সব কেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। ক্রমান্বয়ে দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে অন্যত্র নতুবা যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা সার্বিক অবস্থার উন্নতি করতে হবে যাতে অত্র এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্বে থাকে।

কয়েকটি দেশের নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে সহজেই বুঝতে সুবিধা হয় নির্বাচনে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভূমিকায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। ভারতের একটি জাতীয় নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে: নির্বাচনে ৫৪৩৫ জন প্রার্থী ছিল এবং ২৩০ টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছিল। ঐ নির্বাচনে ৬৫০ মিলিয়ন ভোটার ছিল এবং এর মধ্যে ৩৮০ মিলিয়ন ভোট কাস্ট হয়েছিলো, নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলো ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ যার মধ্যে পুলিশ ছিলো ২ মিলিয়ন। ভারতের রাজনীতিতে সহিংসতা নতুন কিছু নয়; বিহার, উত্তর প্রদেশ, আসাম, জুম্মু এবং কাশ্মীরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ দেখা যায়। কিছু গ্রুপ মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখতে চায় অথবা ফলাফল ঘোষণায় প্রভাব রাখতে চায় সহিংস আচরণের মাধ্যমে। এই সকল ক্ষেত্রে ভারতীয় পুলিশ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র তথা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে।

২০১৩ সালের কেনিয়ায় জাতীয় নির্বাচনে ১৪.৩ মিলিয়ন ভোটার ছিল, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ছিল ৯শ’ জন, ২ লাখ ৪০ হাজার অস্থায়ী সদস্য ছিল নির্বাচন কমিশনের এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিল ৯৮ হাজার ও নির্বাচনী কেন্দ্র ছিল ৩২ হাজার ৬শ’ ১৩ জন। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের দায়িত্ব পালন করেছিল পুলিশ। পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সহিত নির্বাচনী ব্যবস্থায় ছিলো এবং ভোটার রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণায় নিরপেক্ষ ভূমিকা ছিল পুলিশের। কিছু জায়গায় গোলযোগ দেখা দিয়েছিলো কিন্তু পুলিশ সেটি শক্তহস্তে দমন করেছিল। তবে নির্বাচনে গোলযোগ হবে এটা মাথায় নিয়ে পুলিশ বাহিনী তাদের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে।

নির্বাচনে যে কোন পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা কী হতে পারে কিংবা কোন রকম বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে পুলিশের তড়িৎগতিতে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তার আলোকে শ্রীলংকান পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা না বাড়িয়ে তথা পুলিশের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে নির্বাচনকে আরো যুগোপযোগী মানসম্পন্ন ও নিরপেক্ষ করা যায় সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট দেখা যায়, পুলিশকে কিভাবে আরো কৌশলী, দায়িত্বের জন্য আধুনিক করে তোলা ইত্যাদি সম্বন্ধে না বলে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে তাদের দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। সিঙ্গাপুরেও নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কোনরূপ দ্বিধা বা সন্দেহের সুযোগ নেই।

সবশেষে বলা যায়, নির্বাচনকালিন সময় থেকে শুরু করে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পুলিশকে বহুমুখী কাজ করতে হয়। পুলিশের নিরপেক্ষতা এবং সাহসী ভূমিকা একটি নির্বাচনকে শতভাগ সুষ্ঠ ও আশংকামুক্ত ফলাফল উপহার দিতে পারে। আশা করবো, বাংলাদেশ পুলিশ যে কোন দূর্যোগে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। সুশীল সমাজের নিকট কাম্য হবে; পুলিশকে আরো সুদক্ষ, আধুনিক, বিচক্ষণ এবং যে কোন পরিস্থিতিতে দেশের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা বপনের জন্য প্রশিক্ষণ ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Exit mobile version