‘একটা প্রশ্নের মুখোমুখি প্রায়শই হই। আজও হলাম। কৌতুহলউদ্দীপক প্রশ্ন। আমি চলচ্চিত্র নির্মাতা নাকি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা? আগে বিব্রত বোধ করতাম বেশ। মনে হত আমি কেবলই নির্মাতা। নারী নির্মাতা বললে খারাপ লাগত, এখন লাগেনা। বরং গর্ব বোধ করি নারী নির্মাতা পরিচয়ে। এটা আমার স্বাতন্ত্র্য পরিচয় মানুষ হিসেবে।’
এমনটি বলেছেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি এবং নির্মাতা হিসেব অংশ নেওয়া ‘পরমা’ পরিচালক অপর্ণা সেন।
জমজমাট আলোচনার আসরে মেতে উঠেছিল ধানমন্ডি আলিঁয়স ফ্রাঁসেজ মিলনায়তন। আলোচনার বিষয় ‘সিনেমার আয়নায় পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের নারীর তুলনামূলক ধারণা’। লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সিডনি লেভিন। তার মূল আলোচনাপত্রে উঠে আসে বহুবিচিত্র তথ্য।
আলোচনায় উঠে আসে তুলনাগত অবস্থানও। সিডনি জানান, ‘সমতার পিঠ বলে নিজেদের পরিচিত করালেও বিশ্বের সবচেয়য়ে পরিচিত চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি হলিউডে নারী নির্মাতার সংখ্যা শতকরা ১ ভাগ। হলিউডে নারী বিনিয়োগকারী বা স্টুডিওর মালিক কিংবা চিত্রনাট্যেও নারীর অবস্থান সেই অর্থে তাথৈবচ। তবে স্বাধীন নির্মাণে-বিনিয়োগে বা সিনেমার অন্যক্ষেত্রে সে অবস্থান খুব একটা খারাপ নয়। অনেক ভালো, হলিউড ঘরানার চাইতে ।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, মালয়শিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার সিনেমায় নারীর অংশগ্রহণের বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পায়। মান এবং পরিসংখ্যানসহ।
সিডনি বাংলাদেশে নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী ও একই সঙ্গে স্পীকারে পদে নারীর অসাধারণ অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করা আলিন তাসকিয়ান পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের নারী নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেন। তাতে পাশ্চাত্য অনেক ক্ষেত্রেই ভয়াবহ অবস্থায় আছে বলে তথ্য উঠে আসে।
আলোচনায় নারীর প্রতি পুরুষের নির্যাতনমূলক আচরণ বা বৈষম্যর বিরুদ্ধে চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে নারীদের এগিয়ে আসা উচিত বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে শেষ পর্যায়ে অপর্ণা সেন বলেন, নারী-পুরুষের জায়গা নয় আমার কাছে দিন শেষে মানবিক পরিচয়টাই মুখ্য। কাউকে আঘাত না করাটাই আসল। হৃদয়ের কাছে দায়বদ্ধ থাকাটা জরুরী।
সেমিনারটি পরিচালনা করেন তরুণ ব্রিটিশ চলচ্চিত্র প্রযোজনা সমন্বয়ক বার্ণাডেটে শার্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন এবং জেন্ডার স্টাডি বিভাগের সহায়তায় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।