দেশের নদ-নদী দখলকারীরা নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য হবেন বলে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ তুরাগ নদী রক্ষা সংক্রান্ত রিটের রায়ে এ ঘোষণা দেন।
ঐতিহাসিক এ রায়ে দেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল, সমুদ্র সৈকত ও জলাশয়কে রক্ষায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করা হয়।
সেই সাথে নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য আইন সংশোধন করে ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরি এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে রায়ে।
আজ আদালতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ রায়ের মধ্যে আদালত বলেন: নদী দখল ও উচ্ছেদ নিয়ে ‘কানামাছি খেলা’ হচ্ছে। একদিকে নদী দখল করা হচ্ছে, আবার যখন আমরা নির্দেশ দিচ্ছি তখন অবৈধ স্থাপনা ভাঙছে। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার দখল শুরু হচ্ছে। নদী নিয়ে এই কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিৎ।
এ দিন আদালত আরো বলেন: সংবাদপত্র সমাজের নানা অনিয়মের তথ্য তুলে না ধরলে আমরা সে সব অনিয়ম সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। সাংবাদিকরাই হচ্ছেন সমাজের হুইসেল ব্লোয়ার (বংশীবাদক)। আমরা সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই। এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরো (ইফেকটিভ) কার্যকর সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করি।
এর আগের দিন বুধবার হাইকোর্টের এই বেঞ্চ তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ বলে ঘোষণা করেন, যা দেশের সব নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্ট ওইদিন বলেন: ‘অবৈধ দখলদারদের দ্বারা প্রতিনিয়তই দেশের কম-বেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদী। নাব্যতা ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সঙ্কটে পড়তে বাধ্য। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদীকে লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’
আদালত ওইদিন আরো বলেন: ‘মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় ইতোপূর্বে আদালত নানা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেসব রায়ের নির্দেশনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তা নেওয়া হলে তুরাগ নদী রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হত না। শুধু যে তুরাগ নদী আক্রান্ত তা নয়, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদী অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত।’
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা এক রিটে তুরাগ নদীর অবৈধ দখলদারদের নাম ও স্থাপনার তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছিল বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি।
ওই তদন্ত কমিটির দেয়া তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পরে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। এরপর উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করলেন