শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশের তালিকায় নাম উঠলো বাংলাদেশেরও। বিভিন্ন রোগ নিয়ে গবেষণা করা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, দেশে এই প্রথম তিনজন ব্যক্তির শরীরে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঘটেছে।
প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে, সম্প্রতি ইতালি থেকে আসা দুই ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। দেশে ফেরার পর তাদের থেকে সংক্রমিত হয়েছে আরেকজন। আমরা দেখলাম, খবরটি মুহূর্তের মধ্যেই গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে নানান প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় মানুষের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক ছড়ায়।
কিন্তু এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার আসলেও কিছু নেই। বরং সচেতনতা এবং সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, এ নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কের কিছু নেই। কেননা করোনা মোকাবিলায় সরকার পুরোপুরিই প্রস্তুত।
এমন আহ্বানে খুব যে কাজ হচ্ছে, সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। কেননা ‘হুজুগে বাঙালি’ বলে আমাদের একটা আত্মপরিচয় আছে। মানে আমরা সহজ কোনো বিষয়কে আসলে সহজভাবে নিতে পারি না বা দেখতে পারি না। আর এ জন্যই যে কোনো ঘটনার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখি। যদিও বেশিরভাগ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত সেইসব ‘ষড়যন্ত্রে’র কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।
গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা ভাইরাস দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন এই দেশেও সেই ভাইরাস নিয়ে গুজবের ডাল-পালা ছড়ায়। বিশেষ করে গত ১ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে উহান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর তা আরও তীব্র হয়। রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ কয়েকটি জেলা থেকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেই গুজবের পালে তীব্র হাওয়া লাগে। অনেকেই বলতে থাকে, দেশে করোনা ভাইরাস এসেছে। যদিও তাদের দাবির সাপেক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকের আশঙ্কা সত্যি হয়েছে ঠিক। কিন্তু এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ যেভাবে আতঙ্ক প্রকাশ করেছে, সেটাও ঠিক না। কেননা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ হতে না দেয়া। এ জন্য জনসমাগম হয়, এমন স্থান পরিহারের পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরে অবস্থান করেও সুরক্ষা করা সম্ভব।
এছাড়া আর কোনো উপায়ও চিকিৎসকদের আপাতত জানা নেই। কেননা এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। আর তা করতে হলে সাবধানতার পাশাপাশি সচেতন থাকতেই হবে। আমরা মনে করি, করোনা ভাইরাস যাতে নতুন নতুন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে সবার আগে। তবেই এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস থেকে আমরা রক্ষা পাবো।