বাবা, দিদি, জামাইবাবু সবাই ডাক্তার। তাই ঘোষ বাড়ির নিয়ম মেনে পিতার ইচ্ছায় তাঁকেও ডাক্তারি পড়তে হয়েছিল! তবে তিনি ডাক্তারি করেননি, কেননা তাঁর সমস্ত হৃদয় মন জুড়ে ছিল সুর। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন সুরের জাদুকর হবেন। ছোটবেলা থেকে বাড়িতে সংগীত আবহ দেখেছেন। অনেক বড় গাইয়েরা তাঁর বাবা ডা. সনৎ কুমার ঘোষের বাড়িতে প্রতি রবিবার গানের আসরে গাইতেন। সেই পরিবেশে বেড়ে ওঠা বাড়ির বড় ছেলে নচিকেতা ঘোষ।
যার সুরের জাদুতে অসংখ্য গান কালজয়ী হয়ে মানুষের অন্তরে টিকে রয়েছে। তিনি নিজেও ভালো গাইতে পারতেন, ভালো তবলা বাজাতে পারতেন। তবে অতুলনীয় ছিলেন সুর সৃষ্টিতে, সংগীত পরিচালনায়! এখানে নচিকেতা ঘোষের অল-টাইম-গ্রেট কয়েকটি গানের উল্লেখ করছি- আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), তার আর পর নেই (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), মেঘ কালো আঁধার কালো (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), যদি কাগজে লেখ নাম (মান্না দে), ক’ ফোঁটা চোখের জল (মান্না দে), আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে (মান্না দে), মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়), এই মন জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে (আরতী মুখোপাধ্যায়), এমন একটা ঝিনুক খুঁজে (নির্মলা মিশ্র), বনে নয় মনে মোর পাখি আজ (মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়), ছোট্ট পাখি চন্দনা (আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়), এক তাজমহল গড় (পিন্টু ভট্টাচার্য)। এমনি অসংখ্য গানের সার্থক সুরকার নচিকেতা ঘোষের আজ জন্মদিন (২০ মে)।
১৯২৫ সালের ২০ মে তিনি কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে নচিকেতার সংগীত পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘বৌদির বোন’ মুক্তি পায়। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পায় ‘জয়দেব’, তাঁকে বিরাট খ্যাতি আর যশ এনে দেয়। এরপর তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক চলচ্চিত্রে সুর করেছেন, রেকর্ডের জন্য গান তৈরি করেছেন। গগনচুম্বী সাফল্য, আর একের পর এক হিট গানে বাংলার সংগীতপ্রেমী মানুষকে পাগল করে দিয়েছেন। সংগীতের বেলায় তিনি ছিলেন একেবারে চূড়ান্ত রকমের পারফেকশনিস্ট।
তাঁর যোগ্য পুত্র সুপর্ণকান্তি ঘোষও একজন গুণী সংগীত পরিচালক। তারই সৃষ্টি ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ জনপ্রিয়তার শীর্ষে!
১৯৭৬ সালের ১২ অক্টোবর মাত্র ৫১ বছর বয়সে এই বিস্ময়কর প্রতিভাবান সংগীতকারের মৃত্যু ঘটে। নচিকেতা ঘোষের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করছি।