Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

দেশের ছবি নেই, কলকাতার ছবি দিয়ে চলছে বাংলাদেশের হল

বাংলাদেশে ছবি নির্মাণের সংখ্যা কমে গেছে। এ বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তি পেয়েছে মাত্র ২৫টি সিনেমা। এরমধ্যে বেশিরভাগ ছবিকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলছেন, মানহীন ও সেকেলে! সেজন্য রুচিশীল ও এলিট ক্লাস দর্শকরা এসব ছবি এড়িয়ে গেছেন। আর এই কারণে অধিংকাশ ছবি লোকসানের মুখ দেখেছে।

অনেক খারাপের ভিড়ে দু-চারটি মানসম্পন্ন ছবি নির্মিত হলেও সেগুলো দিয়ে সারাবছর দর্শকদের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব না। সে কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় সিনেমা হলগুলো ছবি শূন্যতায় ভুগছে বলে মনে করেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। আর এ কারণেই সিনেমা হল বাঁচাতে বাধ্য হয়েই কলকাতার ছবি আমদানি করে এদেশে চালাচ্ছে সিনেমা ব্যবসায়ী ও হল মালিকরা। যেমন দেখা যাচ্ছে, চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে!

দেশের ছবি নেই বলে কলকাতার তিন ছবি আমদানি করে প্রদর্শন করা হচ্ছে বাংলাদেশের হলগুলোতে। প্রদর্শক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ৩০০ থেকে ৩২০ টির মতো সিনেমা হল আছে। এরমধ্যে ২৭৪ টি হল এই মুহূর্তে চালু আছে। বাকিগুলো ঈদের সময় খোলা হয়, কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। এই ২৭৪ হলের মধ্যে ১৭০ টির বেশি সিনেমা হলে চলছে কলকাতার ছবি!

যারমধ্যে আছে ‘ভাইজান এলো রে’, ‘সুলতান’ এবং ‘ফিদা’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘ভাইজান এলো রে চলছে’ ১২৯ হলে, ‘সুলতান’ তৃতীয় সপ্তাহে চলছে ১৭ সিনেমা হলে। আরেক ছবি ‘ফিদা’ আজ মুক্তি পেয়েছে ২৩ সিনেমা হলে। এদিকে ‘পোড়ামন ২’ ছবিটি চলছে ১২টি প্রেক্ষাগৃহে। এছাড়া বাকি যে হল আছে সেখানে চলছে ঢাকাই অশ্লীল যুগের ছবি!

দেশে সিনেমা সংকটের ফলে কলকাতার ছবি ছাড়া হল বাঁচানোর উপায় দেখছেন না সিনেমা হলের মালিকরা। তাদের ভাষ্য, দর্শকদের পছন্দমতো সিনেমা নির্মাণ করতে আবার সিনেমা হলে ‘হাউজফুল’ এর সেই দিন ফিরে আসবে। আধুনিক গল্প, নতুন লোকেশন এবং গল্পের ভিন্নতা দিয়ে ছবি উপহার দিতে হবে। দর্শক এখন আগের মতো নেই। ইন্টারনেটের কল্যাণে হাতের মুঠোর দুনিয়া পাচ্ছে! তাদের মনঃপূর্ত সিনেমা উপহার দিতে না পারলে চলচ্চিত্রের হারানো গৌরব কখনই ফিরবে না। এজন্য দেশের সিনেমা নির্মাতাদের আরও দক্ষ হতে হবে।

বিষয়টি কীভাবে দেখছেন চলচ্চিত্রের বিজ্ঞজনরা? আসুন জেনে নেয়া যাক। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক নেতা মিয়াঁ আলাউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সিনেমা হল বাঁচাতে তো ছবির খোরাক লাগবে। আমাদের ছবি নেই বলেই তো কলকাতার ছবি চলছে। আমি মনে করি, হল বাঁচাতে ছবির মার্কেট ওপেন করে দেয়া উচিত। সেটা যে দেশের ছবি হোক, চলুক! আমাদের অযোগ্যতার কারণেই বাইরে ছবি চলছে। মানুষ সেগুলো দেখছেন। ‘ভাইজান এলো রে’, ‘পোড়ামন ২’ এর মতো কোয়ালিটিফুল ছবি বানাতে হবে। বাইরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে এখন ঠাণ্ডা মাথার যুদ্ধ চলছে। এই দৈনতার সৃষ্টি হয়েছে আমাদের কারণে। ছবি নির্মাণ না করলে আমরা ব্যাড পলিটিক্স করছি।

তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত আমাদের দেশে কিন্তু ভারতীয় ছবি, উর্দু ছবি চলতো। সেসময় আমাদের ছবি প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা করতো। দলাদলি ভুলে আগের সেই প্রতিযোগিতা আবার ফিরিয়ে আনবে হবে। মিয়াঁ আলাউদ্দিন বলেন, সরকারী সহযোগিতা আরও দরকার। সরকার যে অনুদান দিচ্ছে ৬০ লাখ টাকার মতো সেটা দিয়ে অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য ছবি নির্মাণ করা যায়। কিন্তু ওই টাকায় দিয়ে কি শাকিব খানকে নিয়ে ছবি বানানো যাবে? সরকারী অনুদানের টাকায় নির্মিত ছবি কি হলে ভালো ব্যবসা করেছে? জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণের জন্য সরকারি সহায়তা বেশি দরকার। দেশিয় ছবির মধ্যে ‘হালদা’ একটি অসম্ভব সুন্দর ছবি। এই ধরনের ছবির বাণিজ্যিক মার্কেটিং আরও বাড়াতে হবে।

প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন বর্তমান চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট জানতে চাইলে কিছুটা অভিমানের সুরে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চোখের সামনে একটা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে গেল! কই আঠারো কোটি মানুষের কেউ তো কিছু বললো না। কোনো রিঅ্যাক্ট করলো না। আর যারা এখন ফিল্ম করছেন তাদেরকেও ফিল্ম কি জানতে হবে। এটা কী আগে তাদের সেটা বুঝতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তো হাজার হাজার ছেলেপেলে পাশ করে বের হচ্ছে, কিন্তু সবাই কি প্রকৃত মানুষ হতে পারছে! এখন যারা চলচ্চিত্র বানায় তারা কি সবাই চলচ্চিত্রকার!

‘ভাত দে’ ছবির এই পরিচালক বলেন, আমরা যদি না পারি, তাহলে বাইরের কেউ এসে তো সেটা করবে। নিজেরা বানাতে পারিনা, অন্যরা এতে তো সুযোগ নেবে। চলচ্চিত্রে এতো ভয়ঙ্কর অবস্থা যে এগুলো নিয়ে কথা বলতেও ইচ্ছে হয় না।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দেশের হল বাইরের দেশের ছবির দখলে চলে যাবে এটা আমি অনেক আগেই বলেছিলাম। প্রকৃতি কখনোই তার স্থান শূণ্য রাখে না। কেউ না কেউ এসে তার পূরণ করে। যারা ইন্ডাস্ট্রির নেতা তাদের এটা বোঝা উচিত। যারা ছবি বানাচ্ছে, কাজ করছে তাদেরকে আটকানো হচ্ছে, এই সুযোগে বাইরে থেকে ছবি তো আসবেই। জাজ মাল্টিমিডিয়া, শাকিব খান খানকে অনেকেই ঠিকমতো কাজ করতে দিচ্ছে না। এখন বাইরে ছবি তো আসবেই!

তিনি আরো বলেন, যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ এক প্রকার বন্ধ! এতে লাভ কাদের হলো? ঠিকই তো কলকাতার ছবি চলছে। এত সংকটের মধ্যেও কিন্তু জাজ ছবি বানাচ্ছে। শাকিব খান ঠিকই কাজ করছেন। যারা পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে, তারা ছবি বানাচ্ছে না কেন? তারা ছবি বানাক। ছবি ছবি প্রদর্শন করুক।

এদিকে ঈদের আগে এখন পর্যন্ত দেশি কোনো সিনেমা মুক্তির খবর শোনা যায়নি। তবে আগামি সপ্তাহে ফের ‘প্রিয়া রে’ নামে আরো একটি কলকাতার ছবি মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে।

Exit mobile version