দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলের কারণেই পাটকল শ্রমিক জাহালমকে প্রায় ৩ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে বলে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
দুদকের করা তদন্ত প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দাখিলের পর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এবিষয়ে শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জাহালমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
দুদকের করা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সার্বিক বিবেচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে, তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে।’
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’
আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ২৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। যিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এরপর তদন্ত করে দুদক বলেছে, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।’’
ওই প্রতিবেদনটি গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এরপর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেন। সেই সাথে জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
এ আদেশের পর মুক্তি পায় জাহালম। এরপর দুদক হাইকোর্টের এ বেঞ্চে রুল শুনানিসহ জাহালম সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। তবে দুদকের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হাইকোর্ট বেঞ্চেই জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শুরু হয়। এরপর দুদকের আইনজীবী আদালতকে বলেন, জাহালমের ঘটনাটির তদন্ত করছে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি।
এরপর গত ২৭ জুন হাইকোর্ট জাহালম কাণ্ডে দুদকের করা অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট ১১ জুলাই আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ হাইকোর্টে দুদকের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়।