চট্টগ্রামের মহাসমাবেশ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সাত দফা দাবি আদায় করেই ঘরে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, কারো কাছে মাথা নত করবো না, পরাজিত হবো না। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।
শনিবার দুপুর সোয়া ২টা থেকে চট্টগ্রাম বিএনপির মহানগর অফিসের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভার শুরু হয়।
এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গায়ের জোরে, বন্দুকের নলের মুখে কেউ কোনো দিন টিকে থাকতে পারেনি, পারবেও না। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই চলছে।
‘‘আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আটক করে নিয়ে গেলেন। এরপর কারাগারে পাঠালেন। এতো ভয় কেন আপনাদের? আপনাদের ভয়ের কারণ, আপনারা জানেন যে যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায় আপনাদের ভাঙা নৌকায় জনগণ আর উঠবে না।’’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে৷ আওয়ামী লীগ একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে আইনের শাসন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আমরা হারিয়েছি। আমরা এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করবো।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণআন্দোলনের মুখে ভোটারবিহীন সরকারের পতনও ত্বরান্বিত হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যে কোনও স্বৈরাচার সরকারকে অপসারণের জন্য এই জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমরা সফলভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা:শাহাদত হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় গণফোরাম সভাপতি ড.কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, জেএসডির সভাপতি আ সম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা:জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো:শাজাহান, মীর নাসির, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, সুকোমল বড়ুয়া ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত আছেন
জনসভা শুরুর আগে সকাল ১০টা থেকে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে সামনে রেখে নুর সড়কের নাসিমন ভবনের সামনে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা। জনসভায় আসতে নেতা-কর্মীরা পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে অভিযোগ করে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
তাদের অভিযোগ, সকাল থেকে বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দিচ্ছে। গতকাল রাতেও নগরী এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। আমরা মঞ্চ একটু বড় করতে চেয়েছি কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এছাড়া নগরীর কাজিরদেউরি পর্যন্ত মাইক দিতে চাইলেও পুলিশ দেয়নি।
কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য সমাবেশস্থল ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। জনসভাস্থলের প্রবেশদ্বারে রয়েছে পুলিশের কড়া নজড়দারি।
জনসভার আগে সকালে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা হযরত আমানত শাহর মাজার জেয়ারতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া এগারটায় সিএমপির কমিশনার মাহবুববর রহমান মোবাইল ফোনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে জনসভার অনুমতি দেয়ার কথা মৌখিকভাবে জানান।
পরে বিকেলে লিখিতভাবে ২৫ শর্তে জনসভা করার অনুমতি দেয় সিএমপি উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবদুল ওয়ারিশ।
এতে বলা হয়, দুপুর দুইটা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টার মধ্যেই শেষ করতে হবে জনসভাটি। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা চলে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রামে এটি দ্বিতীয় জনসভা। এর আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে প্রথম জনসভা করে নতুন এই জোটটি।