ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ নিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে মৌলিক চাহিদা পূরণের অবিরাম সংগ্রাম। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সবাই এখনও করছেন বেঁচে থাকার অবিরাম সংগ্রাম। এই সংগ্রাম থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। পরিবারকে একটু সহায়তা করতে রোহিঙ্গা শিশুদের ছোট দোকান দিয়ে বসতে দেখা গেছে।
এমনই এক সংগ্রামী রোহিঙ্গা শিশুর নাম শওকত আরা। তার বয়স মাত্র নয় বছর। পরিবারকে সহায়তা করতে গিয়ে বালুখালী ক্যাম্পে একটি ছোট্ট দোকান চালাচ্ছে শওকত আরা। তার মতো অনেক রোহিঙ্গা শিশু পরিবারকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেদেরকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
মাটির উপর পাটের বস্তা বিছিয়ে সামান্য কয়েকটি জিনিস বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষা করছে শওকত আরা। অথচ এই সময়ে তার স্কুলে থাকার কথা ছিলো। হাতে থাকার কথা ছিল বই, খাতা, কলম এবং খেলনার পুতুল।
কিন্তু তার বদলে এখনও প্রতি সপ্তাহে শওকত আরার মতো অন্তত ১২ হাজার রোহিঙ্গা শিশু বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। এসব শিশুদের কলেরা ও অপুষ্টির প্রভাব প্রবল।
চলতি বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়ছে বসবাসের সমস্যা এবং পানিবাহিত রোগের কারণে। রোহিঙ্গা শিশুরা বিপজ্জনক পথ পার করে এসেছে এবং এখনও তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পাচ্ছে না।
ইউনিসেফের কয়েকটি প্রতিবেদনে জানা যায়, ক্যাম্পের বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণে শিশু ও যুবকরা পাচারকারীদের হাতে পড়ে যাচ্ছে এবং কিছু মানুষ তাদের ভুলপথে নিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি সব ধরনের নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
ইউনিসেফ এখন চারটি বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো হলো- ১. বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অর্থ প্রদান। ২. রোহিঙ্গা শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা দেওয়া এবং রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হওয়া সব শিশুদের দ্রুত অবাধ মানবিক সুবিধা নিশ্চিত করা। ৩. নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমর্থন দেওয়া। ৪. এই সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান টানা এবং রাখাইন রাজ্যে অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।
ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ শিশু। আরো হাজার হাজার শিশু প্রতি সপ্তাহে বর্ডার অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। আগামী ৬ মাস রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ৭৬ মিলিয়ন জরুরি সহায়তার মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ ইউনিসেফের কাছে আছে। তাই দ্রুত দাতাদের সহায়তা তাদের দরকার।
এই অর্থ সংকটের মধ্যে ত্রাণের আশায় না থেকে নতুন করে জীবন সংগ্রামে নামছে শওকত আরার মতো রোহিঙ্গা শিশুরা।