Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

তাসকিনের ম্যাচ পাল্টে দেয়া এক ওভার

বোলিংয়ে তাসকিন। ব্যাটিংয়ে রংপুরের শাহরিয়ার নাফীস। ইনিংসের ১৩তম ওভার। চতুর্থ বলটা ইয়র্ক ফেললেন তাসকিন। মিডলস্টাম্প উপড়ে গেল। দুহাত প্রসারিত করে উড়তে থাকা তাসকিন তখনও জানতেন না কী নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে তার জন্য। যেটা পরে মাশরাফীর রংপুরের থেকে ম্যাচটাই ছিনিয়ে নিয়েছে। চিটাগংয়ের আসরের প্রথম জয়টি ১১ রানের।

একই ওভারের পরের বলটিও ইয়র্ক লেন্থেই ফেলেছিলেন তাসকিন। ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ সেনওয়ারি একটু এগিয়ে এসে লেগে ঠেলে দিতে চাইলেন। কিন্তু গতির তারতম্য বুঝে ওঠার আগেই বল শর্টলেগে দাঁড়িয়ে থাকা মিসবাহর তালুবন্দী।

হ্যাটট্রিক সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে তাসকিন ওভারের শেষ বলটাও করলেন স্টাম্প সোজাই। ব্যাটসম্যান থিসারা পেরেরাও সোজা ব্যাটেই চালালেন। মাটি কামড়ে বোলারের দিকে এগোতে থাকা বলটিতে কোনমতে বুট ছোঁয়ালেন তাসকিন। ননট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দিলে রানআউট বোপারা।

তাসকিনের হ্যাটট্রিক হয়নি। তবে নাফীস-বোপারা মিলে চিটাগংয়ের থেকে ম্যাচটা যখন নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার মঞ্চ সাজাচ্ছিলেন, তখনই রংপুর শিবিরকে কাঁপিয়ে দেয় তাসকিনের ওই ওভার। এক ওভার পরে এসে পেরেরাকে ফিরিয়ে রংপুরের ব্যাটিংই ছন্নছাড়া করে ফেলেন তাসকিন।

পরে তাসকিনের ওভারে মালিঙ্গার পরপর ছয়-চার ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত পেরে ওঠেনি রংপুর। নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৫ রানেই আটকে যায় জিতে টুর্নামেন্ট শুরু করা মাশরাফীর দল।

শুরুতে জোনাথন চার্লসের (১) দ্রুত ফেরা, বাজি জিততে জিয়াউর রহমানকে (৮) ওপেনিংয়ে পাঠানো, মোহাম্মদ মিঠুনের ২৩, কিছুই কাজে লাগানি রংপুরের। নাফীস ২৬ ও বোপারার ৩৮ যা একটু ম্যাচ জমিয়ে তোলার আভাস দিয়েছিল। শেষদিকে তাসকিন ঝড়ের পর পেরেরা ১১, মাশরাফীর ১৩ রানে ফেরা আর ম্যাচে টানতে পারেনি রাইডার্সদের।

ম্যাচসেরা তাসকিন ৪ ওভারে ৩ রান নিতে খরচ করেছেন ৩১ রান। রেইসির ২৬ রানে ২ উইকেট।

এর আগে শুরুর ঝড়ের পর মাঝে পথ হারিয়েও নির্ধারিত ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে চিটাগং ভাইকিংস।

টুর্নামেন্ট তিনদিন গড়ানোর পর মাঠে নামা চিটাগং ম্যাচের শুরুতে ঝড় তুলতে মোটেই দেরি করছে না। শুরুর ঝড়টা আবার শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পারায় মাশুল গুনছে। প্রথম ম্যাচে একশ এসেছিল ১২ ওভারে, দ্বিতীয় ম্যাচে নবম ওভারেই। দুবারই পথ হারিয়েছে ভাইকিংসরা। কুমিল্লার বিপক্ষে পেরোতে পারেনি দেড়শ, একই গোলকধাঁধায় পড়েও রংপুরের বিপক্ষে সেটা করেছে। শেষপর্যন্ত ম্যাচ জিতিয়ে তাসকিন ওই সংগ্রহটাই যথেষ্ট প্রমাণ করলেন!

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ব্যাটে এসে ৪.৪ ওভারেই ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়েছে বন্দরনগরীর দলটি। যাতে আগাগোড়া অবদান লুক রঞ্চির। এই উদ্বোধনীই যে ততক্ষণে ফিফটি পেরিয়ে গেছেন ১৯ বলের টর্নেডোতে। যাতে থাকল ৪ চার ও ৫ ছয়ের মার। বিপিএলের তৃতীয় দ্রুততম অর্ধশতক।

রঞ্চি যখন ফিফটি ছুঁলেন, আরেক উদ্বোধনী সৌম্য সরকারের রান তখন ৩! ব্যক্তিগত ৭ রানে সৌম্যর বিদায়েই ভেঙেছে জুটি। রঞ্চি আরও কিছুক্ষণ ছিলেন। নিউজিল্যান্ড তারকার ৭টি করে চার-ছয়ের ঝড় থেমেছে ৩৫ বলে ৭৮ রানে এসে।

পরে একটি করে চার-ছয়ে দিলশান মুনাবিরা ১৭ বলে ২০ রানে ফিরলে রানের গতি হারিয়ে বসে চিটাগং। লুইস রেইসির ১৬ বলে ১০ যা কমাতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সেটা কিছুটা উতরানো গেছে শেষদিকে। মিসবাহ-উল-হক ও এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে। মিসবাহ এক চারে ৩২ বলে অপরাজিত ৩১ করে সময়ের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি। সেখানে বিজয়ের চার-ছয় ছাড়া চেষ্টার ফল ১৪ বলে অপরাজিত ১৭ রান।

রংপুরের জার্সিতে বল হাতেও উজ্জ্বল রবি বোপারা। ৩ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ২ উইকেট। মলিঙ্গা ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। মাশরাফি ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় এক উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটা হেরেই মাঠ ছাড়তে হল ম্যাশকে।

Exit mobile version