দেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ সড়ক দুর্ঘটনা মারা গেছেন প্রায় ৮ বছর আগে। অথচ তার মতো গুণী নির্মাতার স্মরণে তার জন্মস্থান ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নেই কোনো স্থাপনা, সংগ্রহশালা কিংবা লাইব্রেরি! বিষয়টিকে ভাঙ্গাবাসীর জন্য ‘লজ্জাজনক’ বললেন বর্তমান ভাঙ্গার সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী।
তারেক মাসুদকে যাতে মানুষ মনে রাখে তেমন কিছু করতে চান তরুণ এই সাংসদ। তাই ফরিদপুরে নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিক মানের জাতীয় স্টেডিয়ামটি তারেক মাসুদের নামে ঘোষণা করেছেন তিনি।
তারেক মাসুদের জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায়। নিক্সন চৌধুরী বর্তমানে ওই আসনের সংসদ সদস্য। ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি তারেক মাসুদের নামে ‘কিছু করে যেতে চান’ বলে সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় জানিয়ে ছিলেন।
তারইসূত্র ধরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে কথা বলেন নিক্সন চৌধুরী। তারেক মাসুদ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ক’দিন আগে তারেক মাসুদ স্মরণে ভাঙ্গায় আয়োজিত একটি বইমেলায় উপস্থিত হয়েছিলাম। সেখানে আমি বলেছি, তারেক মাসুদের মতো মানুষ আমাদের গর্ব। তাকে নিয়ে সারা বাংলার মানুষ গর্ব করে, অথচ ভাঙ্গাতেই তাকে স্মরণ করার মতো কিছু নেই। এটা ভাঙ্গাবাসীর জন্য অত্যন্ত লজ্জার।
তারেক মাসুদের জন্য আগামীতে কিছু করে যেতে চান, এমন আশাবাদ জানিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন: তারেক মাসুদের জন্ম ভাঙ্গাতে, তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেনও ভাঙ্গাতে। অথচ এখানে তার নামে একটি লাইব্রেরি পর্যন্ত নেই। ব্যক্তিগত পর্যায়েও কেউ এমন উদ্যোগ নেয়নি, সরকারকেও এখন পর্যন্ত এমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তারেক মাসুদ ছবি তুলতে পছন্দ করতেন, আর কিছু না পারি ভাঙ্গাতে তারেক মাসুদের নামে অন্তত একটি ফটো গ্যালারি আমি করে যেতে চাই।
ফটো গ্যালারি নিয়ে তারেক মাসুদের ভাইয়ের সাথেও কথা হয়েছে। তিনি জায়গা পর্যন্ত দিতে রাজি আছেন। যেকোনো কাজে সবার সহযোগিতা পাওয়া খুব জরুরী। আশা করছি, শিগগির এমন উদ্যোগ আমি নিতে পারবো।-বলছিলেন ভাঙ্গার সংসদ সদস্য।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সদ্য স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর নিয়েও কথা বলেন নিক্সন চৌধুরী। যে স্টেডিয়ামটি তিনি প্রয়াত তারেক মাসুদের নামে করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো কাজের শুরুতে বাধা আসবেই। ভাঙ্গায় নির্মাণাধীন এই স্টেডিয়ামটি তারেক মাসুদের নামে করার ঘোষণা দেয়ায় প্রথমে বাধা পেয়েছি। কিন্তু আমিতো থেমে যাওয়ার পাত্র নই। এখন স্টেডিয়ামের কাজ চলছে, কাজ শেষ হওয়ার পর নামফলকের বিষয় যখন আসবে, তখন তারেক মাসুদের নামটিই স্থাপন করা হবে। স্টেডিয়ামটি তারেক মাসুদের নামে হোক, সমন্বয় কমিটিতেও আমি তা প্রস্তাব করেছি।
এরআগে ভিডিওতে নিক্সন চৌধুরী বলেছিলেন, তারেক মাসুদের একটা ছোট্ট পরিবার থাকে ভাঙ্গাতে। বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ। তার পরিবারের জন্য কিছু করা দরকার। মারা যাওয়ার পর তারেক মাসুদকে নিয়ে সারা বাংলাদেশে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেল? তাই আমি আহ্বান করবো আপনারা একবার হলেও তারেক মাসুদের বৃদ্ধ মায়ের কাছে যান। দেখেন তারা বলবে, ‘কিছুই চাইনা। শুধু তারেক মাসুদের নামে একটা স্মৃতি চাই।’ তাই সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকা থেকে যতকুটু পারবো করবোই।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। মানিকগঞ্জে ঘিওর এলাকায় তিনিসহ পাঁচজন প্রাণ হারান। তার নতুন চলচ্চিত্র ‘কাগজের ফুল’-এর শুটিংয়ের লোকেশন দেখতে তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর সহকর্মীদের নিয়ে পাবনা যান। ফেরার পথে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তারা।