শুরুর বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে প্রতিরোধ, বাংলাদেশ তাতে পেয়ে গিয়েছিল বড় সংগ্রহের ভিত। মাঝে আবার শুরুর মতো বিপর্যয়। শেষটায় দেশের প্রতি ভালোবাসার অনন্য এক নজির দেখালেন তামিম ইকবাল। ছক্কার ফুলঝুরি ছোটালেন মুশফিক। তাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আড়াইশ পেরিয়েছে বাংলাদেশ।
চোট পেয়ে ইনিংসের শুরুতেই মাঠ ছাড়া তামিম শেষটায় মুশফিককে সঙ্গ দিতে চলে যান ২২ গজে। ডাক্তারি রিপোর্টে খেলার অবস্থায় না থাকলেও এ বাঁহাতি ওপেনার শেষটায় সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকা মুশফিককে সঙ্গ দিতে ক্রিজে যান। ব্যাট করেছেন এক হাতে। অপরপ্রান্তে মুশফিক চালিয়ে গেলেন লঙ্কান বোলারদের উপর স্ট্রিম রোলার।
তামিম না নামলে ২২৯ রানে থামত বাংলাদেশ। তামিম নামায় যোগ হয় আরও ৩২ রান। তাতেই বাংলাদেশ পেয়ে গেছে ২৬১ রানের লড়াকু পুঁজি। ১৪৪ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে মুশফিক দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হন তখনও বাকি ইনিংসের ৩ বল। মুশফিকের এটি ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি, ১১চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো। আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১১৭।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার এশিয়া কাপের ম্যাচের উইকেটে ছিল না তেমন সুইং, টার্ন। মরা উইকেটে অসাধারণ বৈচিত্র্য দেখান এক বছর পর লঙ্কান দলে ফেরা লাসিথ মালিঙ্গা। ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের লাগাম টেনে রাখেন এ পেসার।
এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকায় উইকেটের ক্ষুধা কতটা তীব্র ছিল তারই প্রমাণ রাখেন মালিঙ্গা। ক্ষুধা নিবারণ করেন প্রথম ওভারেই। পরপর দুই বলে লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানকে সাজঘরে পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কাকে এনে দেন দুর্দান্ত সূচনা।
লিটন ও সাকিব রানের খাতাই খুলতে পারেননি। লিটন স্লিপে ক্যাচ দেন আর সাকিব হন বোল্ড।
তখন ১ রান তুলতেই নেই ২ উইকেট। পরের ওভারে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে তামিম ইকবালের চোট। এ ওপেনার সুরাঙ্গা লাকমালের প্রথম ওভারের শেষ বলে আঙুলে আঘাত পেয়ে ২২ গজ ছাড়েন। ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগে তামিম করেন ৩ বলে ২ রান।
সেসময় মরুর বুকে ধ্বংসস্তুপে পড়তে পারত বাংলাদেশ। নড়বড়ে শুরুর পর অগোছালো ভাবে খেলতে থাকেন মুশফিক ও মিঠুন। মিঠুন দু’বার ও মুশফিক একবার জীবন পেয়ে নতুন করে দায়িত্ব নেন ইনিংস মেরামতের।
শুরুতে দুই ব্যাটসম্যান নড়বড়ে থাকলেও খোলস ছাড়েন দ্রুতই। পাওয়ার-প্লে’র ১০ ওভার পেরিয়ে যাওয়ার পর দুই প্রান্ত থেকেই আসতে থাকে রান। সিঙ্গেলস, ডাবলস, বাউন্ডারিতে গতিময় রাখেন স্কোরবোর্ড।
১০ ওভারে ২৪ রান তোলা বাংলাদেশ শতরান পার করে ২০তম ওভারে। বাংলাদেশের ইনিংস ঘিরে স্বপ্নের বেলুন বড় হতে থাকে তৃতীয় উইকেট জুটিতে। টাইগারদের সমান্তরাল পথে আবার বাধা হয়ে দাঁড়ান মালিঙ্গা। ৬৩ করা মিঠুনকে সাজঘরে পাঠিয়ে ভাঙেন ১৩২ রানের জুটি। এ ডানহাতি মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান খেলেন ৬৮ বল। যাতে ছিল ৫টি চার ও ২টি বিশাল ছয়ের মার।
মিঠুন সাজঘরে ফেরার পর আবার পালাবদল। হাল ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও (১)। তাদের দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর এক প্রান্ত আগলে রাখা মুশফিককে কিছুটা সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। লাকমালকে উইকেট দেয়ার আগে করেন ১৫ রান।
অধিনায়ক মাশরাফীও কিছুটা সময় মুশফিকের সঙ্গে কাটান। দুই বাউন্ডারিতে ১১ রান করে ফেরেন সাজঘরে। ২ রান করে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে রুবেল হোসেন সাজঘরে ফিরলে মুশফিকের শতক নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ে। ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমান উইকেটে নামার পরই তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং ভরসা।
পরে ১০ রান করে মোস্তাফিজ ফেরার পর সবাই যখন ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়, তখনই চমকে দিয়ে নামেন তামিম। একটি বল মোকাবেলা করলেও তার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ৩২ রান যোগ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।