তালাবদ্ধ দরজা। কোথাও কেউ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ডাক দিয়ে যার কাছে দরজার চাবি থাকে তাকে পাওয়া যায়। দরজা খুলে ঢুকতেই দেখা যায় ছিমছাম দু’টি রুম। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের খেলার সামগ্রী। রয়েছে শিশুদের জন্য মজার মজার নানা বইও।
এটি রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে নির্মিত ডে কেয়ার সেন্টারের (শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র) চিত্র। সরকারি সহযোগিতায় এবং ওয়েজ আর্নারস কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে কর্মজীবী মায়েদের সুবিধায় সেখানে ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হলেও নেই কোন শিশু।
কাগজে কলমে দেখা যায়, ডে কেয়ার সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে তিন জন শিশু ভর্তি হলেও থাকে না কেউ।
কর্মজীবী মায়েদের অনুরোধে ডে কেয়ার সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কেন কোন শিশু নেই সেখানে? কেনইবা বহু উদ্যোগে নির্মিত ডে কেয়ার সেন্টারটি ফাঁকা পড়ে আছে? তার উত্তর মেলে এই ডে কেয়ারে ভর্তি হওয়া শিশু আরিয়ানের মা আলহামরা পারভীনের কাছ থেকে।
আলহামরা পারভীন ওয়েজ আর্নারস কল্যাণ বোর্ডের অ্যাসিট্যান্ট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। পরিবার নিয়ে থাকেন মিরপুরে। তার এক বছরের সন্তান আরিয়ানকে তিনি রাখতে চেয়েছিলেন এই ডে কেয়ার সেন্টারটিতে। তবে অফিস থেকে বাসায় যাওয়া আসায় প্রতিদিন চলে যায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় পথের ভোগান্তিতে ছোট্ট শিশুটি অস্থির হয়ে যায়। কান্নাকাটি শুরু করে। অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিশুটিকে বাড়িতে একা রেখেও যেতে পারেন না তিনি। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অবশেষে নিজের মাকে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। নিশ্চিন্তে এখন শিশুটিকে তার নানীর কাছে রেখে অফিসে যেতে পারেন এই নারী।
আলহামরা জানান, এখানে বাচ্চা রাখতে চাওয়া বেশিরভাগ মায়ের গল্পটা ঠিক এরকমই।
তবে প্রতিষ্ঠার প্রায় সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেখানে থাকছে না কেউ। বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ পড়ে থাকে সেন্টারটি। কোন মা তার শিশুকে নিয়ে এলে খুলে দেয়া হয় ডে কেয়ার সেন্টারের তালা।
ডে কেয়ার সেন্টরটিতে রয়েছে দুটো রুম। যার একটিতে শিশুদের পড়ালেখা ও শোবার জায়গা। অপর রুমটিতে রয়েছে খেলার নানা সরঞ্জামাদি। রয়েছে শিশুর দৌড় ঝাঁপের জন্য একটি বড় খোলা পরিসর। এছাড়া ব্রেস্ট ফিডিং এর জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার।
ওয়েজ আর্নারস কল্যান বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম চ্যানেল অই অনলানকে বলেন: এটা প্রতিষ্ঠার আগে জরিপ চালিয়ে দেখেছিলাম প্রায় ২০ জনের মতো শিশু আমরা এখানে পাবো। কিন্তু গত তিন মাসে এখানে ভর্তি হয়েছে মাত্র তিন জন শিশু।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন: ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বাচ্চার মায়েরা এখানে নিরাপত্তার বিষয়টা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সবাই ভাবছে আগে অন্য শিশুরা ভর্তি হোক, তারপর আমার শিশুটিকে ভর্তি করবো। এভাবে কেউ এগিয়ে না আসায় ফাঁকা পড়ে থাকছে ডে কেয়ার সেন্টারটি।
এই ডে কেয়ার সেন্টারটি ভবিষ্যতে মায়েদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।