বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল দ্রুত শুনানির জন্য পেপারবুকের অপেক্ষায় আছে রাষ্ট্রপক্ষ।
পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে গেলে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আলোচিত এ হামলার ১৫ বছর পূর্তির আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে সময় বলে দেয়া সম্ভব না যে কবে শুনানি হবে। তবে পেপারবুক তৈরি হয়ে গেলেই আমি ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের দ্রুত শুনানির পদক্ষেপ নিব।
এক প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, একটা হত্যাকাণ্ডের মামলায় সব আসামির একই রকম সাজা নাও হতে পারে। কাজেই আদালত কোন যুক্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়নি। সেটা না দেখে বলা সম্ভব না।
এদিকে পেপারবুক তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারের তত্ত্বাবধানে দুইজন মুদ্রাক্ষরিক এ মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ করছেন।
নিয়ম অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেয় তখন সে দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী মামলার সকল নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। সে ধারাবাহিকতায় এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য গত বছরের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আসে। পরে ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
এর আগে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের করা জেল আপিল গত ১৩ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
তার আগে গত ২৭ নভেম্বর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে এ মামলার রায়সহ মোট ৩৭ হাজার তিনশ ৮৫ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় আসে।
গত ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।
সে রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ওই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন:
১. লুৎফুজ্জামান বাবর, ২. মো. আব্দুস সালাম পিন্টু, ৩. মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন, ৪. মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, ৫. মো. আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, ৬. আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, ৭. মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, ৮. মহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, ৯. মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর, ১০. আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, ১১. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ১২. হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, ১৩. হোসাইন আহম্মেদ তামিম, ১৪. মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, ১৫. মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাউফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, ১৬. মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, ১৭. মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ১৮. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম এবং ১৯. মো. হানিফ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন:
১. তারেক রহমান, ২. হারিছ চৌধুরী, ৩. শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, ৪. মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, ৫. মাওলানা সাব্বির আহমদ, ৬. আরিফ হাসান ওরফে সুমন, ৭. হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, ৮. আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, ৯. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, ১০. মহিবুল মুত্তাকিন, ১১. আনিসুল মুরছালিন, ১২. মোহাম্মদ খলিল, ১৩. জাহাঙ্গীর আলম বদর, ১৪. মো. ইকবাল, ১৫. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, ১৬. কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ১৭. মুফতি শফিকুর রহমান, ১৮. মুফতি আবদুল হাই এবং ১৯. রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু। এছাড়া রায়ে আরো ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন বর্তমান শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতা-কর্মী।