থাইল্যান্ডে পাহাড়ের গুহায় আটকা পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের তরুণ কোচকে উদ্ধারে ডুবসাঁতারের প্রশিক্ষণ না-ও লাগতে পারে বলে আশা করছে উদ্ধার কর্তৃপক্ষ। এজন্য একসঙ্গে তিনটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাকর্ন এ তথ্য জানান।
টানা বৃষ্টির কারণে সেচ চেষ্টার পরও লম্বা উঁচুনিচু গিরিপথের কিছু জায়গায় বর্তমানে ৩০ মিটারের বেশি পানি জমে আছে। তাই এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল, আটকে থাকাদের বের করতে হলে তাদেরকে স্কুবা গিয়ারসহ ডুবসাঁতার শেখাতে হবে। নইলে বন্যার পানি নামা পর্যন্ত তাদের কয়েক মাসও অপেক্ষা করতে হবে।
তবে সেচের মাধ্যমে খুব বেশি পানি কমানো যাচ্ছে না। তাছাড়া টানা বৃষ্টিপাত চলছেই। তাই কয়েক মাস চুপচাপ অপেক্ষা করাটাও খুব ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে আপাতত ডুবসাঁতার, সেচ ও খনন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
গুহার ভেতর যে ছোট উঁচু শুকনো জায়গাটায় ১৩ জনের দলটিকে পাওয়া গেছে তার ঠিক ওপর থেকে ড্রিলিং করে তাদের বের করার কথা প্রথমে ভাবা হলেও সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। কারণ ওই জায়গা থেকে বাইরে পাহাড়ের পৃষ্ঠের উচ্চতা ৮শ’ মিটার, অর্থাৎ প্রায় এক কিলোমিটারের কাছাকাছি। এত লম্বা পথ খনন করে ঢোকা একই সঙ্গে খুবই দুঃসাধ্য এবং বিপজ্জনক।
তবে আশপাশের কোনো স্থান ড্রিলিং করে সেখানে ঢোকা সম্ভব কিনা, সেই উপায় খোঁজা হচ্ছে।
ছেলেদের ডুবসাঁতার শিখিয়ে স্কুবা গিয়ার পরিয়ে বের করে আনার কথা ভাবা হলেও এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে। পুরো গিরিপথের অন্তত দু’টি জায়গায় পথ এতটাই সংকীর্ণ যে, সেখান দিয়ে স্কুবা গিয়ার পরে পার হওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া গিরিপথটি পার হয়ে গুহার মুখে পৌঁছানো পর্যন্ত রাস্তা প্রায় ১১ ঘণ্টা দীর্ঘ।
তাই আপাতত সেচের মাধ্যমে পানি কমানোর চেষ্টা চলছে। পানির স্তর আগের চেয়ে কিছুটা কমে আসায় গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, হয়তো স্তর আরও নেমে গেলে তাদেরকে হেঁটেই বের করে আনা সম্ভব হবে। তবে বিষয়টি পুরোপুরি পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে পরামর্শ না করে খনন বা সেচ চালাতে স্থানীয়দের নিষেধ করেছেন নারংসাক ওসোতানাকর্ন।
আর যদি স্কুবা গিয়ার ছাড়াই বের করে আনার চেষ্টা করা হয়, তবে নিরাপত্তার খাতিরে আটকা পড়াদের প্রত্যেককে পুরো মুখ ঢাকা মাস্ক দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের বের হওয়ার জন্য পুরো সুড়ঙ্গ বরাবর অক্সিজেন ট্যাংক ও ডাইভিং লাইন বসানো হবে।
পাশাপাশি পানি ভরা অন্ধকার গুহায় যেন সামান্য হলেও আলো পাওয়া যায় সেজন্য চলার পথে গ্লো স্টিক (রেডিয়ামযুক্ত জ্বলজ্বলে দণ্ড) লাগিয়ে রাখা হবে।
আটক ছেলেরা ভেতরে ঠিকঠাক শ্বাস নিতে পারছে কিনা, জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, গুহার চুনাপাথরের দেয়ালের ছোট ছোট ছিদ্র এবং ফাঁটল দিয়ে ভেতরে যথেষ্ট অক্সিজেন ঢুকতে পারে।
বোস্টন ডট কম জানিয়েছে, তাদের সহজে পরিপাকযোগ্য উচ্চ শক্তিসম্পন্ন তরল খাবার দেয়া হচ্ছে, যেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে খনিজ উপাদান রয়েছে।
গত ২৩ জুন দুপুরে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ফুটবল প্র্যাকটিস শেষে ১২ কিশোরের দলটিকে নিয়ে ঘুরে দেখার জন্য চিয়াং রাই শহরের ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি এলাকার লুয়াং নাং নন গুহায় ঢুকেছিলেন তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ।
তারপর থেকে আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দফায় দফায় উদ্ধার চেষ্টার পরও তাদের কোনো চিহ্ন না পেয়ে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছিল। টানা ৯ দিন ধরে পাগলের মতো উদ্ধার অভিযান চালিয়ে অবশেষে তাদের খুঁজে পায় থাই নেভি সিলের বিশেষ প্রশিক্ষণ পাওয়া ডুবুরিরা।
সোমবার স্থানীয় সময় রাতে গুহার ভেতর ছোট একটি উঁচু জায়গায় ১৩ জনকে খুঁজে পায় উদ্ধারকারী দল। ওই জায়গাটাই শুধু শুকনো ছিল।