যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরপরই স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাত থেকে ফিলিস্তিনের সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে ইসরাইলের নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বৃহস্পতিবারও পশ্চিম তীরের বেথলহেমে থেমে থেমে এই সংঘর্ষ চলছে। তবে এই ঘটনায় হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়: এখনও থেমে থেমে চলছে সংঘর্ষ। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইল নিরাপত্তাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে, অপরদিকে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তাবাহিনী জলকামান, টিয়াশেল এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করছে।
বুধবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। এরপরই শুরু হয় উত্তেজনা। ইতোমধ্যে গাজা উপত্যকা ও বেথেলহাম শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি এবং কুশপুত্তলিক পোড়ানো হয়েছে। এছাড়া ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে বেথেলহাম শহরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বড়দিন উপলক্ষে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি’র আলোকসজ্জার সুইচ বন্ধ করে দিয়েছে। বড়দিনে আলোকসজ্জা চালু করা হবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ঘোষণার পর বিশ্বের নেতাদের পাশে পাননি ট্রাম্প। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তার এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। সমস্যা সমাধানে আলোচনার কথা বলেছেন তারা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন: মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকার একমত নয়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হবে না। ইসরায়েলে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাস তেল আবিবকেন্দ্রিক এবং এটি সরানোর কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই।
মে বলেন: জেরুজালেম নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার এবং দীর্ঘমেয়াদী। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে আলোচনা করেই বিষয়টি নির্ধারিত হওয়া উচিত। চূড়ান্তভাবে জেরুজালেম ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের যৌথ রাজধানী হওয়া উচিত। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমাধান অনুযায়ী আমরাও মনে করি পশ্চিম জেরুজালেম ফিলিস্তিন অধিকৃত অঞ্চল।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন: জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী করার বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। তিনি যেকোন ধরনের সহিংসতা এড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মুখপাত্র টুইট বার্তায় বলেছেন: বার্লিন কখনোই এ ধরনের অবস্থান সমর্থন করে না, কারণ একমাত্র দুটি রাষ্ট্রের সমাধান কাঠামোই বিষয়টি মিমাংসা করতে পারে।
চীন এবং রাশিয়াও এই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই পদক্ষেপ ওই অঞ্চলের উত্তেজনা তীব্র করতে ভূমিকা রাখবে।
পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন: কয়েকদিন ধরে বিষয়টি আলোচনায় আসায় আমি চুপ থাকতে পারি না। জাতিসংঘের সমাধান মেনে এই শহরের মর্যাদা রক্ষায় আমি সকলের প্রতি দৃঢ়ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন: ট্রাম্পের বিবৃতি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যকার শান্তি আলোচনার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। দুটি দেশের সমঝোতাই কেবল কোন চূড়ান্ত অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হলে দুই দেশের বৈধ সম্মতি নিতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে। এতে জেরুজালেম সম্যসা সমাধান এবং দুটি দেশের ভবিষ্যত রাজধানী নির্ধারণে কোন পথ অবশ্যই পাওয়া যাবে বলে মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছে মিশর, আরব লীগ, তুরস্ক, ইরান, লেবানন, কাতার, জর্ডানসহ আরও অনেক দেশ।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সহিংসতাকে উস্কে দেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।