রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন নবনিযুক্ত কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন: ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়নে শুধু সার্জেন্ট ও টিআই এর উপর নির্ভর থাকলে চলবে না। আমাদের ব্যস্ততম সময় বিশেষ করে সকালে অফিস শুরুর ঘণ্টা তিনেক ও অফিস ছুটির ঘণ্টা তিনেক মাঠে থাকতে হবে। ডিসি থেকে শুরু করে ট্রাফিক বিভাগের নিম্নতম সদস্যকেও মাঠে থাকতে হবে।
নির্দেশনা দিয়েছি যে, আমার নির্দেশনা যদি প্রতিপালিত প্রতিফলিত না হয় তাহলে প্রোগ্রাম করে সুনির্দিষ্ট ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে আট ঘণ্টা করে ডিউটি বন্টন করে দেবো।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্বগ্রহণ করেই রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ইতোমধ্যে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের মতামত নিয়েছি।
‘ঢাকা মহানগর এলাকার ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় আমি অত্যন্ত কঠোর থাকবো। যাদের উপর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদেরকেও মনিটরিং করা হবে। আমাদের সিনিয়র অফিসাররা কাজ করবো।’
তবে কমিশনার বলেন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা শুধু পুলিশের একারপক্ষে খুবই কঠিন। জানি না কতোটুকু পারবো। তবে জনগণের সামনে দৃশ্যমান একটা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা উপস্থাপন করতে চাই।
‘শুধু সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নয়, নানাবিধ কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যেমন আজকে রাজধানীর দুটি জায়গায় ঝামেলা হচ্ছে। একটি গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় বসে গেছে, আরেক স্থানে ছাত্ররা। তাদের সাথে নেগোসিয়েশন করে রাস্তা থেকে উঠাতে যে সময়টি লাগে তা ঘণ্টা পেরিয়ে যায়, কখনো আরও বেশি। ঢাকা শহরে কোথাও ৫ মিনিট বন্ধ থাকলে সেটির জের পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এমন কিছু ঘটে যেখানে ট্রাফিক পুলিশের কোনো হাত, নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তবুও এর দায় আমাদের উপর পড়ে।
তবুও বলবো, পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমরা আমাদের দায়িত্ব অস্বীকার করবো না। দায়িত্ব পালনে আমরা সার্বক্ষনিকভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই।’
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সবকিছুই পুলিশের হাতে নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রাফিকের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। রাস্তাজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, নির্মাণ কাজ হচ্ছে। গাড়ি বাড়ছে কিন্তু পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। চাইলেই আমরা সবকিছু পরিবর্তন করতে পারবো না, তবে যানজট মানুষের সহনীয় পর্যায়ে আনার চেষ্টা করবো। জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে গাড়ি থামানোর সংস্কৃতি চালু করতে অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি। আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করবো, তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ এমন একটি মতবাদ, এর থেকে ফিরিয়ে আনা দূরুহ। মানুষকে বুঝানোর জন্য বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি। নতুন জঙ্গি যেন তৈরি না হয়, সে বিষয়ে নজরদারী আছে। যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছে, তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের উপর আক্রমণের বিষয়ে আমরা কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি এবং জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাদকের সাপ্লাই চেইন বন্ধে পুলিশ কাজ করছে। কিন্তু চাহিদা বন্ধ করা না গেলে পৃথিবীর কোথাও মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আপনার সন্তান যেন মাদকে না জড়িয়ে যায়, সেজন্য আপনাকেই নজর রাখতে হবে। আপনার সন্তান মাদকে জড়িয়ে গেলে আমাদের সহযোগিতা নিন। আমরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স রয়েছে। পুলিশের কোনো সদস্য যদি মাদক সংশ্লিষ্টতায় কোনোভাবে অংশীদার হয়ে থাকে, তাহলে তাকে আমরা মাদক ব্যবসায়ীর মতোই ট্রিট করব। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
রাজনৈতিকভাবে পুলিশ ব্যবহৃত হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সার্বিকভাবে পরিস্থিতি যেমনই হোক দায়িত্ব অস্বীকার করে নয়, বরং সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার।