এমন একটি জায়গা, যেখানে স্বাভাবিক সূর্যালোক পৌঁছে না, পৌঁছে না নির্মল বাতাস। একটি বাড়ির মাটির তলার ঘর যেন কোনো এক কূয়ার তলা। এমনই এক স্থানে আশ্রয় নিয়েছে কিছু ছন্নছাড়া মানুষ যার মধ্য কেউ চোর, কেউবা জুয়ারি। একজন ব্যর্থ অভিনেতা তো অন্যজন অভিজাত বংশোদ্ভূত যে কিনা হারিয়েছে তার গৌরব, কিংবা অন্যজন বারবনিতা, আছে তালার মিস্ত্রি, শ্রমিক, পশম ব্যবসায়ী, মুচি, এদের সকলেরই একসময় বেঁচে থাকার আশা ছিল, স্বপ্ন ছিল, জীবনের লক্ষ্য ছিল।
এ অন্ধকারচ্ছন জীবনেও আছে প্রেম আছে মানব মানবীর চিরাচরিত সম্পর্কের প্রকাশ। তাই নাতাশার মতো এক তরুণীকে স্বপ্ন দেখতে শেখাতে চায় পেপেল নামের এক যুবক। পেপেল এই অন্ধকার কুঠুরির বাসিন্দা যে পেশায় একজন চোর। তালার মিস্ত্রির স্ত্রী আন্নার অসুস্থতা এই অন্ধকার কুঠুরির কাউকে বিচলিত করে না বরং বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। এখানে জীবন ও মত্যুর ব্যবধান এতই ক্ষীণ যে একদিন আন্নার মত্যুও কাউকে তেমন একটা স্পর্শ করে না।
একদিন এই কুঠুরিতে লুকা নামের এক ভবঘুরে বৃদ্ধের আগমন ঘটে। সে এই দুনিয়াকে সরাইখানা বলে অভিহিত করে। ভবঘুরে এই লোকটির পরিচয় শেষ অবধি উন্মুচিত না হলেও সে এই কুঠুরিতে মানুষের গুণের কথা মানুষকে ভালোবাসার কথা মানুষের মর্যাদার কথা বলে আলো জ্বালিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও আলো জ্বালিয়ে দেয়। শেষ অবধি বাড়িওলা এই কুঠুরির মালিক কস্তিলভের খুন হয়ে যাওয়া ক্ষনিকের জন্মানো আশাকে দুরাশায় পরিণত করে। লুকাও আলেয়ার মতো হারিয়ে যায়। অভিনেতার আত্মহত্যা এদের সামান্য দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টাকেও লুপ্ত করে দেয়। এভাবেই এই অন্ধকার কুঠুরিতে জীবন জীবনের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে।
সংগ্রামে ন্যুব্জ মানুষের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ম্যাক্সিম গোর্কির কালোত্তীর্ণ মাস্টারপিস ‘দ্য লোয়ার ডেপথস’। মার্কস এর দ্বিশততম জন্মবার্ষিকীর বছরে তার জন্মদিনের মাসে টানা পাঁচদিন মঞ্চস্থ হবে ‘দ্য লোয়ার ডেপথস-নীচুতলার মানুষেরা’। অভিনীত হবে নাটমণ্ডলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টার প্রযোজনা নাটকটি। নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক তানভীর নাহিদ খান। শ্রমজীবী, নিপীড়িত, বাস্তুহারা, সর্বহারা, রাষ্ট্রহারা মানুষের উদ্দেশ্যে প্রতি সন্ধ্যা ৭.০০ টায় নাটমণ্ডলে মঞ্চস্থ হবে এই নাটক। যা অনুবাদ করেছেন ‘লালন’, ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘হুলিয়া’ খ্যাত নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল।
নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক তানভীর নাহিদ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম নির্দেশনা। বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় এ নাটকটি অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়।’