রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি মসজিদ থেকে সিমেন্টের বস্তাবন্দি শিশু মনিরের (৮) মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, সঠিক সময়ে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে শ্বাসরোধ করে শিশু মনিরকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, আব্দুল জলিল হাদী, মো. আকরাম ও আহাম্মদ সফি ওরফে তোহা। এ সময় তাদের হেফাজত হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি পাতলা তোয়ালে, ২টি সিমেন্টের বস্তা, ২টি কালো রংয়ের দড়ি, সিমসহ ১টি মোবাইল সেট, মৃতদেহের পড়নে থাকা গ্যাবাডিংয়ের ফুল প্যান্ট ও পাঞ্জাবি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, ডগাইর নতুন পাড়ার নুর-ই মদিনা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ঈমাম আব্দুল জলিল হাদী শিশু মনির হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
মনির তার মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন এবং মসজিদুল -ই- আশেয়া জামে মসজিদের দোতলা থেকেই মনিরের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। আরেক আসামি মো.আকরাম গত বছর মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়েছিল এ বছরও তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আহাম্মদ সফি ওরফে তোহা নুর-ই মদিনা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
ফরিদউদ্দিন বলেন, সঠিক সময়ে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে শ্বাসরোধ করে শিশু মনিরকে হত্যা করা হয়। প্রথমে তাৎক্ষণিকভাবে আব্দুল জলিল হাদী ও আহাম্মদ সফি ওরফে তোহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে তারা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তাদের দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বংশালের মালিটোলা এলাকা থেকে অন্য অভিযুক্ত মো.আকরামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ডেমরার ডগাইর নতুন পাড়ার মোঃ সাইদুল হকের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১২), মেঝ মেয়ে মুন্নি আক্তার (৯) ও ছোট ছেলে মো. মনির হোসেন (৮) ডগাইর নতুনপাড়ার নুর-ই মদিনা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত।
প্রতিদিনের মত রোববার (৭ এপ্রিল) তারা তিনজনেই সকাল সাতটায় মাদ্রাসায় যায়। মেঝ মেয়ে মুন্নি আক্তার বাসায় এসে বাবাকে বলে, মনিরকে মাদ্রাসায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন তিনি তার স্ত্রীসহ মেয়েদেরকে নিয়ে মাদ্রাসায় এবং মাদ্রাসার আশেপাশে সম্ভাব্য সকল জায়গায় ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে ।
একই রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি একটি মোবাইল নম্বর থেকে ভিকটিমের পিতা সাইদুলের মোবাইলে ফোন দিয়ে ছেলের বিনিময়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। মুক্তিপণের টাকা ডেমরা থানার মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ভিতরে জানাজার খাটিয়ার নিচে রেখে আসার কথা বলে। টাকা না দিলে ছেলের লাশ পাবেন বলে হুমকি দেয়।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি পুলিশকে জানালে, পুলিশ সম্ভাব্য সকল জায়গায় উক্ত ছেলেকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। পরের দিন মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ২য় তলা থেকে ৩য় তলায় উঠার সিড়ির চৌকিতে সিমেন্টের বস্তার ভিতরে রশি দিয়ে পেচানো অবস্থায় শিশু মনির এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মনিরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাত ৮টার দিকে মনিরের বাবার কাছে অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসে। এ সময় অপরহরণকারী মনিরুলের বাবার কাছে তার মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করেন। আর দাবিকৃত টাকা মসজিদের খাটিয়ার নিচে রাখতে বলেন।
আরও জানা যায়, রোববার রাত ২ টার দিকে বাবা সাইদুল হক তার ভাইসহ মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ঈমাম আব্দুল জলিল হাদীর কাছে ১ লক্ষ টাকা রেখে আসেন। মৃত শিশু মো. মনিরুল ইসলাম ডেমরার ডগাইর নতুনপাড়া এলাকার সামসু মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া মো. সাইদুল হকের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শরাইল থানার বিটগর গ্রামে।