Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

ঝর্ণার জন্য বাংলাদেশ কাঁদছে না

ঈদের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে মুসল্লিবেশে সন্ত্রাসী হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। পুলিশ-দুর্বৃত্তদের সঙ্গে সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলের পাশের একটি বাড়িতে ঝর্ণা রানী ভৌমিক (৪৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হন।

রান্না ঘর থেকে বের হয়ে শোয়ার ঘরে যাওয়া মাত্রই জানালা দিয়ে একটা গুলি এসে ঠিক মাথায় লাগে তার। এতে ঘরের ভেতরেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। মেঝে ভেসে যায় রক্তে। পরিবারের সদস্যদের তখন তাকিয়ে তাকিয়ে চোখের জলে তার চলে যাওয়া দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

নিহত গৃহবধূ ঝর্ণাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর।

তিনি লিখেছেন, ‘না, আমি ঝর্ণার জন্য কাঁদছি না। ঝর্ণার জন্য আমি কোনো শোকগাঁথাও তৈরি করছি না। ঝর্ণার জন্য যে এই সব কিছু করা যায়- তাও বিবেচনায় নিচ্ছি না। কিশোরগঞ্জের কোনো এক ঝর্ণা মরে গেছে, তাতে কি এমন ক্ষতি হয়েছে- দেশের কিংবা সমাজের। কিছুই না।

ঝর্ণা নিতান্তই দরিদ্র এক গৃহবধূ। সে কিন্তু কোনো আন্দোলন করতে যায় নি। ধর্ম নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে কোনো ব্লগ লিখতেও যায়নি। দরিদ্র গৃহবধূ তার স্বামী সন্তান নিয়ে আপন ভূবনেই ছিলো। এমনকি ঈদের দিনে, শোলাকিয়ায় যেদিন তাণ্ডব হয়ে গেলো, সেদিন সে ঘর থেকে বেরই হয়নি। সন্তানদের জন্য খাবার তৈরি নিয়ে নিজ ঘরেই ব্যস্ত ছিলো। এমনকি কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে উঁকিঝুকিঁ মারতেও যায়নি। তবু ঝর্ণাকে মরতে হয়েছে, নিজের শোবার ঘরেই চিরশয্যা নিয়েছে ঝর্ণা।

কার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ঝর্ণা? না, এই প্রশ্ন কেউ করেনি। বহুল আলোচিত আইএসও তার খুনের দায় দায়িত্ব স্বীকার করে কোনো বিবৃতি দেয়নি। সন্ত্রাসীদের গুলি, না পুলিশের গুলি ঝর্ণার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে- এই প্রশ্ন অবান্তর। ঝর্ণাদের মৃত্যু নিয়ে এই সব প্রশ্ন করতে নেই।

ঝর্ণার মৃত্যুর জন্য কেউ দু:খ প্রকাশ করেছে? হুমম! কে করবে? রাষ্ট্র? সরকার? রাজনীতি? হুমমম! ভালো প্রশ্ন তো! ঝর্ণারা মরে গেলে তার জন্য কাউকে দু:খ প্রকাশ করতে হবে কেন?

না। ঝর্ণা, তোমার জন্য বাংলাদেশ কাঁদছে না। তোমার জন্য আমি কাঁদছি না। তোমার জন্য আসলে কেউই কাঁদছে না। শোনো ঝর্ণা রানী ভৌমিক। এই দেশে সবার জন্যই কান্না থাকে না। কারো জন্য কাঁদতে হলেও কতোগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়। তুমি সেই সব শর্তের ধারকোছেও নেই।

আমি তোমার জন্য কাঁদছি না ঝর্ণা। আমরা কেউই না।’

Exit mobile version