চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

১৩ লাখ শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে সমাধানও দিতে হবে

গত মে মাসে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান স্নাতক পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা অর্জন করে দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক। তাহলে দেশে কোন সমস্যা থাকবে না। বর্তমানে অর্থনৈতিক সমস্যাসহ কিছু সমস্যা আছে, তা কয়েক বছরের মধ্যে কেটে যাবে। শিক্ষার সুযোগ থেকে পিছিয়ে পড়া সকলকে এগিয়ে নেয়া রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু, সম্প্রতি প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরুর সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান যে তথ্য জানালেন, তা যদি অর্থমন্ত্রীর কথার সঙ্গে মেলাতে যাই তাহলে বলতে হয়– দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েও এবছর (২০১৬) সমাপনী পরীক্ষার আগে ঝরে পড়েছে প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। তিনি এই ঝরে পড়া বা পিছিয়ে পড়াকে স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন। কেন এই অবস্থা? কেন এই ঝরে পড়া? প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হওয়ার পরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী যখন ঝরে পড়াকে স্বাভাবিক বলেন, তখন বুঝতে হবে সবকিছু আসলে ঠিক পথে নেই। এরকম ঝরে পড়া সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যত রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে প্রজন্মের নেতিবাচক দিক তুলে আনছে। শিক্ষা এখন শুধুমাত্র বিনামূল্যের বই, বিনা বেতনে স্কুল এবং উপবৃত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষার অতিরিক্ত উপকরণ থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতামূলক প্রাইভেট কোচিং-গাইড সবকিছু শিক্ষাকে এখন বাণিজ্যে পরিণত করেছে, যা অনেকের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এরকম ঝরে পড়ার জন্য অনেক শিক্ষাবিদ শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা এবং নিম্নমানের শিক্ষাকে দায়ী করছেন। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে অতিরিক্ত চাপ, অসম প্রতিযোগিতা, আনন্দহীনতা ও অকার্যকর শিক্ষা কারিকুলামকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ না করেই বাল্যবিয়ে এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবে কর্মে যুক্ত হওয়ার প্রবণতাকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা। বর্তমান সরকারের আমলে শুরু হওয়া পঞ্চম শ্রেণি থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এ সরকারের আমলেই তুলে দিয়ে তা অষ্টম শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে (সামনের বছর থেকে কার্যকর হবে), যা প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমিয়ে কিছুটা আনন্দময় ও কার্যকর পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে অনেক মনোবিদ মতামত রেখেছেন। কিন্তু, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আর বাস্তবতার নিরিখে সেই ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের, করতে হবে সমাধানও। নাহলে প্রধানমন্ত্রী যে স্নাতক পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করছেন, সে সুযোগ নেয়ার জন্য একসময় হয়তো স্নাতক পর্যায়ে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। হয়তো ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের বিভিন্ন সম্ভাবনা ও পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের অভাবে ভুগতে হবে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সূচক ও ইতিবাচক পরিসংখ্যান শুধু কাগুজে ফিরিস্তি হয়ে থাকবে।